
ছবি: রাজধানীতে যত্রতত্র রেখে দেওয়া নির্মাণ সামগ্রীর ইট-বালু-সিমেন্টসহ অপরিকল্পিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারনে বেশি ধুলাবালি বাতাসে উড়ে। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা শহর বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক বায়ু দূষণ পরিস্থিতির সম্মুখীন। প্রায় প্রতিদিনই শহরের বায়ু দূষণের পরিমাণ শীর্ষে চলে আসছে, যা মানুষের শ্বাস নেয়ার জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। শুক্রবার, ছুটির দিনেও, ঢাকার বায়ু দূষণের মাত্রা বিশ্বের ১২৬টি শহরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকার বায়ুর মান ছিল ২৬২, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্যকর বায়ু মানের চেয়ে ২০ গুণ বেশি। এটি খুবই অস্বাস্থ্যকর হিসেবে গণ্য হয়।
বিশ্ব বায়ুদূষণ সূচক অনুযায়ী, ৬ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকার বায়ুর একিউআই ছিল ২৬৪, যা 'খুবই অস্বাস্থ্যকর' হিসেবে চিহ্নিত। এর পরপরই পাকিস্তানের লাহোর একিউআই ১৯৪ হয়ে ঢাকাকে টপকে শীর্ষে চলে যায়। তবে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় বায়ুদূষণ ছিল চরম পর্যায়ে, যখন ঢাকার ১০টি স্টেশনের মধ্যে ৩৬৬ একিউআই রেকর্ড করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরের মানুষের জন্য গত আট বছরে মাত্র ৪৯ দিন নিরাপদ বায়ু ছিল, আর ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে একদিনও নিরাপদ বায়ু ছিল না। শীতকালীন মাসগুলোতে, বিশেষত নভেম্বর থেকে মার্চ, ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা আরও বেড়ে যায় এবং প্রায় প্রতি দিনই তা স্বাস্থ্যগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বায়ুদূষণজনিত কারণে বাংলাদেশে ৭৮ হাজার থেকে ৮৮ হাজার মানুষ মারা গেছে এবং ২ লাখের বেশি মানুষ শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য প্রধানত নির্মাণ কাজ, ইটভাটা, শিল্পকারখানা এবং যানবাহন দায়ী। তবে, আন্তঃদেশীয় বায়ুদূষণও একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে বায়ু দূষণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে জনস্বাস্থ্য বিপদের মুখে পড়ছে। বায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে। ঢাকায় অস্বাস্থ্যকর বায়ু মানুষকে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা সৃষ্টি করছে এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত করার আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।
ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে বেশ কিছু পরিবেশকর্মী ও নাগরিক সংগঠন সক্রিয় রয়েছে। শুক্রবার জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে এক অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বায়ুদূষণ রোধে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়। কর্মসূচির আয়োজকরা বলেন, সরকার এখনো এ সমস্যা সঠিকভাবে সমাধান করার জন্য কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
পরিবেশকর্মীরা দাবি করেন, ঢাকাকে বায়ুদূষণমুক্ত করতে একটি সুদৃঢ় পরিকল্পনার প্রয়োজন, যার মাধ্যমে নির্মাণ কাজ, যানবাহন ও অন্যান্য দূষণকারক উপাদানগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা যাবে। তারা পরিবেশবান্ধব গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু করার জন্য এবং নির্মাণকাজে দূষণ নিয়ন্ত্রণের দাবিও জানিয়ে আসছেন।
বিশ্ব ব্যাংকের গবেষণা বলছে, বায়ু দূষণ বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় পরিবেশগত সমস্যা। ২০১৬ থেকে ২০২4 সাল পর্যন্ত ঢাকায় মাত্র ৪৯ দিন নিরাপদ বাতাসে শ্বাস নেয়া সম্ভব হয়েছে, যা প্রকৃতির জন্য একটি বড় সংকট।
এদিকে, নাগরিকরা দাবি করেছেন যে, সরকারের উচিত দূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন ও নীতির বাস্তবায়ন বাড়ানো, যাতে ভবিষ্যতে পরবর্তী প্রজন্ম নিরাপদ বাতাসে শ্বাস নিতে পারে। পরিবেশকর্মী সিমু নাসের বলেন, বায়ুদূষণকে অগ্রাধিকার দিয়ে তা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, তা না হলে জনস্বাস্থ্য বড় বিপদের মুখে পড়বে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে, বিশেষত শিশুদের জন্য। শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন জটিলতা, হাঁপানি, ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের মতো রোগের সৃষ্টি হচ্ছে, যা মানুষের গড় আয়ু কমিয়ে দিচ্ছে।
ঢাকার বায়ুদূষণ পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে উঠেছে যে, শহরের সাধারণ মানুষদের স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যদি এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে এটি বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
বায়ু দূষণের কারণে ঢাকার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে সমস্যায় ভুগছেন। বিশেষত শীতকালে দূষণের মাত্রা আরও বেড়ে যায়, যা শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা তৈরি করে। বায়ুদূষণের ফলে মানুষের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি আরও সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে এবং দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপ বাড়ছে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, যদি বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয়, তবে বাংলাদেশ পরিবেশগতভাবে আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। সরকারের উচিত দূষণ নিয়ন্ত্রণে গঠনমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করা, যাতে নাগরিকরা নিরাপদ ও সুস্থ পরিবেশে বসবাস করতে পারেন।
repoter