
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানিয়েছে, বর্তমানে দেশের মোট ১৯.২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। গত বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশের দারিদ্র্য মানচিত্র ২০২২’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র্যতার হার শহরের তুলনায় বেশি, তবে কিছু শহরেও দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে।
২০১৭ সালের ক্রয়ক্ষমতা সমতার ভিত্তিতে নির্ধারিত আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমা অনুযায়ী, যারা দৈনিক ২.১৫ ডলারের কম আয় করেন, তারা দরিদ্র হিসেবে গণ্য হন। এবারের রিপোর্টে দেখা গেছে, দেশের বিভাগীয় দারিদ্র্য হিসেবে সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্য বরিশাল বিভাগে রয়েছে, যেখানে ২৬.৬ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে। অপরদিকে, চট্টগ্রাম বিভাগে দারিদ্র্যের হার ১৫.২ শতাংশ, যা দেশের সবচেয়ে কম।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্য মাদারীপুর জেলায়, যেখানে দারিদ্র্যের হার ৫৪.৪ শতাংশ। এর পাশাপাশি, মাদারীপুরের ডাসার উপজেলা দেশের মধ্যে সবচেয়ে গরিব উপজেলা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যেখানে ৬৩.২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে।
বিবিএসের গবেষণায় আরো দেখা গেছে, ঢাকা শহরের ভেতরও দারিদ্র্যতর পরিসর ভিন্ন। সবচেয়ে কম দারিদ্র্য ঢাকা শহরের পল্টন এলাকায়, যেখানে দারিদ্র্যের হার মাত্র ১ শতাংশ। তবে, ঢাকা শহরের কামরাঙ্গীরচর, ভাষানটেক এবং মিরপুর এলাকায় যথাক্রমে ১৯.১ শতাংশ, ১৬.২ শতাংশ এবং ১২.২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিলেট, রংপুর, খুলনা এবং ঢাকা বিভাগে দারিদ্র্য বেড়েছে। তবে বরিশাল বিভাগে দারিদ্র্য হার আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে, ২৬.৯ শতাংশ থেকে ২৬.৬ শতাংশে নেমে এসেছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির উপপ্রধান সিমোন লসন পার্চমেন্ট এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান মো. মাহবুব হোসেনের উপস্থিতিতে ঢাকা শহরের আগারগাঁওয়ে বিআইসিসি সম্মেলন কক্ষে প্রতিবেদনটির প্রকাশনা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের, জাতিসংঘের সংস্থা, উন্নয়ন সংস্থা এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, রাজধানী ঢাকা শহরের বিত্তবান এলাকা যেমন গুলশান ও বনানীতে দারিদ্র্য সত্ত্বেও কিছু সংখ্যা বিরল। গুলশানে দারিদ্র্য হার ৩.২ শতাংশ এবং বনানীতে ১১.৩ শতাংশ। অপরদিকে, ধানমন্ডি, মতিঝিল, রমনা এবং কোতোয়ালির মতো ব্যবসায়িক ও অভিজ্ঞান এলাকাগুলোতেও দারিদ্র্য হারের তুলনায় কিছুটা উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে।
দারিদ্র্য এবং বিত্তহীন জনগণের মধ্যে পার্থক্য আরও বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রকট হয়েছে। দেশের দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা এবং তাদের জীবনযাত্রার মান নিয়ে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটি দেশের সমাজ ও অর্থনীতির উন্নতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের দারিদ্র্য হার কমানোর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা ও স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন জরুরি।
repoter