ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
৩ এপ্রিল ২০২৫ , ০২:৫০ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* চাঁদপুরের ৪০টি গ্রামে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ রবিবার * প্রতিযোগী না হয়ে প্রতিপক্ষ হলে ক্ষতিই নিজেদের: পঞ্চগড়ে সারজিস আলম * জুলাই বিপ্লবের শহীদ পরিবারদের পাশে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক * ভূমিকম্প বিধ্বস্ত মিয়ানমারে যাচ্ছে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর উদ্ধারকারী দল * শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে, সৌদিতে রবিবার ঈদ উদযাপিত হবে * “বাংলাদেশ কোরআনের উর্বর ভূমি” — পিএইচপি কোরআনের আলো প্রতিযোগিতায় ধর্ম উপদেষ্টার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা * চা শ্রমিকদের পাশে সিলেটের ডিসি — দুর্দশায় ত্রাণ নিয়ে হাজির প্রশাসন * সাত বছর পর পরিবারের সান্নিধ্যে ঈদ উদযাপন করছেন খালেদা জিয়া * মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ভয়াবহ ভূমিকম্পে শতাধিক মৃত্যুর আশঙ্কা * আগামীকাল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ২ ঘণ্টার লেনদেন

দেশ গড়ার দ্বিতীয় সুযোগ যেন নষ্ট না হয়: আসিফ নজরুল

repoter

প্রকাশিত: ১১:৪২:১৩পূর্বাহ্ন, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১১:৪২:১৩পূর্বাহ্ন, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। ছবি : সংগৃহীত

ছবি: মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। ছবি : সংগৃহীত

আজ ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এ দিনে জাতি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে সেই বীর সন্তানদের, যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত আত্মত্যাগ করেছিলেন। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের আইন ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীরা যে দেশপ্রেমের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তারই ধারাবাহিকতা আমরা দেখেছি জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে। তরুণ প্রজন্ম এবং ছাত্ররা জীবনের মায়া ত্যাগ করে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বৈষম্যহীন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছে। তাদের সেই আত্মত্যাগের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র গঠনের দ্বিতীয় সুযোগ এসেছে, তা যেন কোনোভাবেই নষ্ট না হয়।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের যথাযথ সম্মান জানিয়ে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। একদলীয় মানসিকতা এবং একটি বিশেষ দলের ব্যর্থতার কারণে সেই সম্ভাবনা ধূলিসাৎ হতে বসেছিল। এবার সেই ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রান্তে পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের সহযোগী রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস বাহিনীর সদস্যরা দেশকে মেধাশূন্য করার উদ্দেশ্যে শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞ চালায়। বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে এ হত্যাকাণ্ড গোটা জাতিকে স্তব্ধ করে দেয়। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও বুদ্ধিজীবী হত্যার ক্ষত দীর্ঘস্থায়ী হয়ে রয়ে গেছে।

বুদ্ধিজীবী হত্যার পেছনে ছিল সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। বিশেষ করে ১৪ ডিসেম্বর রাতে ঢাকায় সান্ধ্য আইন জারি থাকা অবস্থায় ঘাতক চক্র তালিকা ধরে ধরে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী ও সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের তাদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। নির্যাতনের পর তাদের হত্যা করে ফেলে রাখা হয় রায়েরবাজারের ইটখোলা ও মিরপুরের বধ্যভূমিতে। পরদিন সকালে এসব স্থানে বুলেটবিদ্ধ, ক্ষতবিক্ষত নিথর দেহগুলো পড়ে থাকতে দেখা যায়।

মুক্তিযুদ্ধের কালরাত্রির প্রত্যক্ষদর্শী এবং পরবর্তী গবেষণায় জানা যায়, বুদ্ধিজীবীদের হত্যার আগে তাদের উপর চালানো হয়েছিল অমানবিক নির্যাতন। বুলেটের আঘাত ছাড়াও অনেকের শরীরে বেয়নেটের ক্ষত ছিল। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত জাতীয় সংকলন ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা প্রায় এক হাজার ৭০ জন।

বুদ্ধিজীবী হত্যার পেছনে পাকিস্তানি বাহিনীর উদ্দেশ্য ছিল পরিষ্কার। তারা মনে করেছিল, দেশের মেধাবী এবং বুদ্ধিজীবী শ্রেণিকে নির্মূল করতে পারলে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করা সম্ভব হবে। কিন্তু তাদের সেই নৃশংস পরিকল্পনাও বাঙালি জাতির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে সরকারিভাবে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিনের শুরুতে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে জাতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে তাদের প্রতি, যারা দেশকে স্বাধীন করার সংগ্রামে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও নানা কর্মসূচির মাধ্যমে শহীদদের স্মরণ করছে।

বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব এখন তরুণ প্রজন্মের। অধ্যাপক আসিফ নজরুলও তার বক্তব্যে এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, শহীদদের যে ত্যাগ ও আদর্শ ছিল, সেটি ধারণ করে দেশ গড়ার জন্য তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। দেশের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে তাদেরই হাত ধরে।

অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, “বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। আমরা একবার ব্যর্থ হয়েছিলাম স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে। এবার যেন সে ভুল আর না হয়। তরুণদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে।”

১৪ ডিসেম্বরের এই দিনে জাতি যখন স্মরণ করছে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের সেই হৃদয়বিদারক অধ্যায়, তখন সকলেরই প্রত্যাশা একটি সমৃদ্ধ, শোষণমুক্ত ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার। শহীদদের আত্মত্যাগের সার্থকতা তখনই আসবে, যখন তাদের স্বপ্নের সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।

বুদ্ধিজীবী দিবসের এই স্মরণে জাতির পক্ষ থেকে বারবার সেই অঙ্গীকারই উচ্চারিত হচ্ছে। শহীদদের আত্মা যেন শান্তি পায়, সে লক্ষ্যে আগামী প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গঠনের কাজে এগিয়ে আসতে হবে।

repoter