ছবি: - প্রতীকী ছবি
ডেঙ্গু পরিস্থিতি আবারও উদ্বেগজনক রূপ নিয়েছে। এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে ৮৮৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছে ৩৭৩ জন এবং বাকিরা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের। তবে একই সময়ে ৯৩৮ জন রোগী চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৫ হাজার ৭১২ জন। এদের মধ্যে ৮১ হাজার ৪৫৬ জন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেছেন। তবে এই বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪৮ জনে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষাকালে এডিস মশার প্রজনন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে প্রতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। তবে চলতি বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি গত কয়েক বছরের তুলনায় আরও ভয়াবহ।
২০২৩ সালে ডেঙ্গুর ভয়াবহ রূপ লক্ষ্য করা যায়। ওই বছর জুন থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করে। বছর শেষে দেশে মোট তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এদের মধ্যে ঢাকা শহরের হাসপাতালে ভর্তি হয় এক লাখ ১০ হাজার ৮ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় দুই লাখ ১১ হাজার ১৭১ জন।
ওই বছর তিন লাখ ১৮ হাজার ৭৪৯ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু ঘটে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বছরে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যু।
এর আগে ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন, যেখানে প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়।
২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ তেমন দেখা যায়নি। তবে ২০২১ সালে পরিস্থিতি আবার খারাপ হয়। সে বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৮ হাজার ৪২৯ জন এবং মারা যান ১০৫ জন।
২০২২ সালেও ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক ছিল। ওই বছর ৬২ হাজার ৩৮২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন, যার মধ্যে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা জরুরি। এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা, জলাবদ্ধতা নিরসন, এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
সাধারণ নাগরিকদেরও সচেতন থাকতে হবে। মশার কামড় থেকে বাঁচতে ঘরের ভেতরে এবং বাইরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, মশারি ব্যবহার করা, এবং বদ্ধ পানির জায়গাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
প্রতি বছরই ডেঙ্গুর প্রভাব বাড়তে থাকায় স্বাস্থ্যখাতে চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, শহরে জনসংখ্যার বৃদ্ধি, এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে আগামী বছরগুলোতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আরও কার্যকর এবং প্রযুক্তিনির্ভর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়বে।
সরকার, স্থানীয় প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ডেঙ্গু আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
repoter