
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সম্মেলনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার চাইলে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হতে পারে। বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) স্থানীয় সময় বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াবের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ড. ইউনূস বলেন, যদি মানুষ দ্রুত সংস্কার চায়, তাহলে এই বছরের শেষ নাগাদ নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে, যদি জনগণ দীর্ঘমেয়াদী ও সুদূরপ্রসারী সংস্কার চায়, তাহলে নির্বাচন আয়োজনে আরও ছয় মাস সময় লাগতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, বিগত ১৬ বছরে নতুন ভোটারদের ভোট দেওয়ার সুযোগ হয়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
তিনি আরও বলেন, সরকার নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। তবে জনগণের সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কী ধরনের নির্বাচন ও সংস্কার চায়। এটি নির্ধারণেই নির্বাচন আয়োজনের সময় নির্ভর করবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, জনগণের মতামত না জেনে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।
প্রধান উপদেষ্টা ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, গত বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে বৈষম্য দূরীকরণ এবং সমান সুযোগ নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলন করেছিল। সেই সময় শিক্ষার্থীরা দেয়ালে গ্রাফিতির মাধ্যমে তাদের আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন প্রকাশ করেছিল।
অধ্যাপক ইউনূস বর্তমান প্রজন্মকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, এই প্রজন্ম পুরনো পদ্ধতিতে ফিরতে চায় না। বরং তারা একটি নতুন, উন্নত বাংলাদেশ গড়তে চায়। তিনি উল্লেখ করেন, প্রযুক্তির প্রভাবের কারণে বর্তমান তরুণ প্রজন্ম শুধু বাংলাদেশেরই নয়, বরং বৈশ্বিক একটি অংশ হয়ে উঠেছে।
ড. ইউনূস জানান, তরুণদের নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে একটি ‘ঐকমত্য কমিশন’ গঠনের কাজ চলছে। এই কমিশন রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের সংগঠনগুলোর সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করবে। এর মাধ্যমে ‘জুলাই সনদ’ নামে একটি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে।
এছাড়া দেশের অর্থনীতিকে ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা ফিরে আসার বিষয়টি উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, দেশের আর্থিক অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাচ্ছে।
ড. ইউনূসের মতে, তরুণ প্রজন্মের অমিত সম্ভাবনা রয়েছে এবং তারা পুরনো পদ্ধতির পরিবর্তে নতুনভাবে দেশ গড়তে বদ্ধপরিকর। তার সরকারের লক্ষ্য হলো এই প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করা এবং দেশের সামগ্রিক অগ্রগতি নিশ্চিত করা।
repoter