
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান শহীদদের আত্মত্যাগের ঋণ শোধ করতে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এটি শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করার ন্যূনতম উপায় হতে পারে।
আজ শনিবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আমাদের জাতিসত্তা ও জাতীয়তাবাদের পরিচায়ক ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৯৭১ সালে শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন একটি দেশ পেয়েছি। দেশ স্বাধীন না হলে আমাদের এই পদ-পদবী বা মর্যাদার কিছুই পাওয়া সম্ভব হতো না। এজন্য জাতি হিসেবে আমাদের সকলেরই এই আত্মত্যাগের গভীর তাৎপর্য উপলব্ধি করা উচিত।
তিনি বলেন, শহীদ পরিবারের সদস্যদের দুঃখ-যন্ত্রণা এবং তাদের অন্তরের রক্তক্ষরণকে আমাদের হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে হবে। স্বাধীনতার জন্য শহীদ হওয়া মানুষদের ঋণ কখনো শোধ করা সম্ভব নয়, তবে তাদের আত্মত্যাগের মর্যাদা রক্ষা করতে আমাদের নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য স্মরণ করে অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছে। দেশের প্রতিটি সংকটময় সময়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জাতির পাশে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালেও আমাদের তরুণরা দেশের জন্য আত্মত্যাগ করেছে এবং অসম্ভবকে সম্ভব করেছে।
তিনি আরও বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাদের কবর চিহ্নিতকরণ একটি জরুরি বিষয়। এ কাজ দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালের শহীদদের স্মরণে নতুন প্রজন্মের তরুণরাও আজ দেশের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করছে। এ ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করে শহীদদের আত্মত্যাগের মহিমা উপলব্ধি করতে হবে এবং এ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে।
আজ দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণস্থ কবরস্থান, জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণের স্মৃতিসৌধ এবং মিরপুর ও রায়ের বাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসহ বিভিন্ন হলের মসজিদে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়ে শহীদদের স্মরণে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।
সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইকরামুল হক, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম শেখ, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ এবং শহীদ গিয়াস উদ্দিন আহমদের ছোট বোন অধ্যাপক সাজেদা বানু।
এছাড়া আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু, মুক্তিযোদ্ধা প্রাতিষ্ঠানিক ইউনিট কমান্ডের নেতৃবৃন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশন, তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী সমিতি, কারিগরি কর্মচারী সমিতি, চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়ন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ পরিবার কল্যাণ সমিতির নেতৃবৃন্দ।
বক্তারা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাঁদের রক্তের ঋণ কোনোভাবেই শোধ করা সম্ভব নয়। তবে তাঁদের আত্মত্যাগকে স্মরণ রেখে জাতি হিসেবে আমাদের নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠান শেষে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
repoter