
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গায় রোটা ভাইরাস ও আবহাওয়াজনিত কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে চলেছে। গত এক সপ্তাহে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৮৩ জন ডায়রিয়া রোগী। এদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু ও বয়স্ক। রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসক ও নার্সরা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ ডিসেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত মোট ২৮৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। ৯ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল ৪৩ জনের বেশি রোগী, যাদের বেশিরভাগই শিশু। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের অভিযোগ, স্যালাইনসহ অন্যান্য ওষুধ পাওয়া গেলেও স্যালাইন সেট ও ক্যানোলা সরবরাহ নেই।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি গাইদঘাট গ্রামের পলি খাতুন বলেন, “আমার ৮ মাসের ছেলে তিন দিন ধরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। রোগীর চাপ এত বেশি যে জায়গা পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তবুও সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত থাকতে হবে।”
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার নাজমা খাতুন জানান, তার মেয়ে গত দুদিন ধরে পাতলা মল ও বমি করছিল। সকালে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। তিনি বলেন, “হাসপাতাল থেকে ওষুধ দিলেও স্যালাইন সেট ও ক্যানোলা নেই। বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে, যা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য।”
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রকিব সাদী বলেন, “হাসপাতালে কলেরা স্যালাইনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহ রয়েছে। তবে স্যালাইন সেট ও ক্যানোলা নেই। আশা করছি, অল্প সময়ের মধ্যে এ সমস্যা সমাধান হবে।”
শিশু ওয়ার্ডের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মাহবুবর রহমান মিলন জানান, শীতজনিত রোগের পাশাপাশি রোটা ভাইরাসের কারণে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, “রোটা ভাইরাসের কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। আক্রান্ত শিশুরা সাধারণত ৪ থেকে ৫ দিন ডায়রিয়ায় ভুগে। এই সময় পার হলেই ভাইরাসটি মারা যায় এবং শিশুরা সুস্থ হয়ে ওঠে।”
তিনি আরও বলেন, “শিশুদের ক্ষেত্রে বাসি খাবার দেওয়া যাবে না এবং বাইরের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। শীতের সময় শিশুদের প্রতি বাড়তি যত্ন নিতে হবে। অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা বন্ধ না হলে ডায়রিয়া পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।”
তিনি পরামর্শ দেন, ১ থেকে ৬ মাস বয়সী শিশুদের শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত। এ সময় অন্য কোনো খাবার দেওয়া যাবে না। এমনকি খিচুড়ি খাওয়ানোর ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। শিশুর যত্নে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে এবং রাস্তার ধারের খাবার পুরোপুরি এড়িয়ে চলা উচিত।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মতে, অতিরিক্ত রোগীর চাপ ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে সেবা দিতে অসুবিধা হচ্ছে। তবে শিগগিরই স্যালাইন সেট ও ক্যানোলার সংকট কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
স্থানীয় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ডায়রিয়া মোকাবিলায় স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি।
repoter