ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
৫ ডিসেম্বর ২০২৪ , ১২:৫০ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে লক্ষ্যমাত্রা: ৪-৫ শতাংশে নামানো হবে * কারামুক্ত হলেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার * জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় ঐক্যের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার * চীনকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-২১ হকি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ইতিহাস * ইমাম হোসেন তাঈম হত্যা মামলায় যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি গ্রেপ্তার * অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে ধৈর্যের সঙ্গে লড়াই করতে হবে: তারেক রহমান * বিপিএল থিম সংয়ের কিছু লাইন লিখেছেন ড. ইউনূস * ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বিষয়ে একচুলও ছাড় নয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তীব্র প্রতিবাদ * দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি * জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানাবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস

চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যাকাণ্ড: হাইকোর্টে রাষ্ট্রের অগ্রগতি প্রতিবেদন

repoter

প্রকাশিত: ০১:২০:২৫অপরাহ্ন , ২৮ নভেম্বর ২০২৪

আপডেট: ০১:২০:২৫অপরাহ্ন , ২৮ নভেম্বর ২০২৪

ফাইল ছবি

ছবি: ফাইল ছবি

চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার ঘটনা ও ইসকন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) হাইকোর্টে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এদিন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষ এবং সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে। এরই মধ্যে ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকারের এই পদক্ষেপকে হাইকোর্ট সন্তোষজনক বলে মন্তব্য করেছে।

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চে মামলার বিষয়ে অগ্রগতি জানাতে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন। আদালতে তারা জানান, সরকার এ বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে পরিচালনা করছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

আদালত তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ ধরনের তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। রাষ্ট্রকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকতে হবে যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়।

সংঘর্ষ ও আইনজীবী হত্যাকাণ্ড

গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে তার অনুসারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের এক পর্যায়ে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ (৩৫) নামে এক আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

নিহত সাইফুল ইসলাম লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি গ্রামের বাসিন্দা এবং চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন। তিনি সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। ওই সংঘর্ষে আরো বেশ কয়েকজন আহত হন এবং আদালত প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশের এলাকায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করার পর তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। আদালত প্রাঙ্গণে তার অনুসারীরা এই আদেশের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে।

মামলার অগ্রগতি

সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলাগুলোতে দাঙ্গা, ভাঙচুর, এবং হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

হাইকোর্টের নির্দেশনা

এই হত্যাকাণ্ড এবং ইসকন ইস্যুতে উত্থাপিত বিতর্কে ২৭ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনির উদ্দিন একটি আবেদনের মাধ্যমে হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি ইসকনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার এবং তিনটি জেলায় ১৪৪ ধারা জারির আদেশ চাইলে হাইকোর্ট রাষ্ট্রপক্ষের কাছে পরিস্থিতির অগ্রগতি জানতে চান।

রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে গ্রেপ্তার অভিযানের পাশাপাশি দাঙ্গা এড়াতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের এই প্রতিবেদন শুনে হাইকোর্ট জানায়, তারা সরকারের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট। তবে পরিস্থিতি যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়, সে বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন বিচারকরা।

ইসকন ইস্যু নিয়ে বিতর্ক

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী ইসকন থেকে বহিষ্কৃত হলেও তার অনুসারীদের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিতর্ক চলছে। হিন্দু সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনের আড়ালে তিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে তার অনুসারীরা দাবি করেন, চিন্ময়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

ইসকনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের কর্মকাণ্ড তাদের সংগঠনের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ কারণেই তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে আদালত প্রাঙ্গণের সংঘর্ষে ইসকনের কোনো ভূমিকা নেই বলে দাবি করেছে সংগঠনটি।

ভবিষ্যৎ করণীয়

রাষ্ট্রপক্ষের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। একইসঙ্গে তারা নিশ্চিত করেছে যে তদন্ত প্রক্রিয়ায় সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা হবে।

হাইকোর্ট রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে যে এ ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি যেন আর না ঘটে, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। পাশাপাশি চলমান মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত সম্পন্ন করে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

repoter