ছবি: নিহত আইনজীবী
চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) বহিষ্কৃত নেতা ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুরের পর আজ (২৬ নভেম্বর) তার অনুসারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে চট্টগ্রাম আদালত চত্বর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ ঘটনায় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে এক আইনজীবী নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন।
নিহত আইনজীবী চুনতি এলাকার জামাল উদ্দিনের ছেলে এবং চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে সম্প্রতি নিয়োগপ্রাপ্ত। মাথায় ইটের আঘাতে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সংঘর্ষের শুরু: আদালতে উত্তেজনা থেকে রাস্তায় বিশৃঙ্খলা
আজ দুপুরে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চট্টগ্রাম ৬ষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করলে তার কয়েক’শ অনুসারী আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ শুরু করে। তারা প্রিজন ভ্যান আটকে রাখে, মাটিতে শুয়ে পড়ে প্রতিবাদ জানায়। পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করলে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
এ সময় অনুসারীরা আদালত ভবন, জেলা পরিষদ, ও আশপাশের এলাকায় ভাঙচুর চালায়। তাদের ছোড়া ইটের আঘাতে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী রফিকসহ আরও কয়েকজন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় তিন ঘণ্টা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় থাকে।
ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি: ২০টি গাড়ি ভাঙচুর, স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত
সংঘর্ষের সময় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীরা সেনাবাহিনীর জিপ, সরকারি গাড়ি, গণমাধ্যমকর্মীদের মোটরসাইকেলসহ অন্তত ২০টি যানবাহন ভাঙচুর করে। আদালত চত্বরের বিভিন্ন স্থাপনা ও রাস্তায় অবস্থিত দোকানপাটেও হামলা চালানো হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পরে পুলিশের সঙ্গে যোগ দিয়ে বিশৃঙ্খলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করেন।
মামলা ও বিচারিক প্রক্রিয়া
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা হয় গত ৩০ অক্টোবর। তাকে গতকাল (২৫ নভেম্বর) ঢাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রামে নিয়ে আসে। আজ সকালে তাকে আদালতে হাজির করা হলে জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরবর্তী জামিন শুনানি আগামীকাল মহানগর দায়রা জজ আদালতে অনুষ্ঠিত হবে।
ইসকন থেকে বহিষ্কার এবং পেছনের ঘটনা
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস আগে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক ছিলেন। সম্প্রতি সংগঠনটি তাকে বহিষ্কার করে। তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ এবং বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন। গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে তার নেতৃত্বে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়, যার পরই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়।
এই সংঘর্ষে নিহত ও আহতদের প্রতি শোক জানিয়ে আইনজীবী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
repoter