
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
ছাত্র আন্দোলনের মুখে সার্বিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিলোসি ভুকেভিচ পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
পদত্যাগের কারণ হিসেবে ভুকেভিচ বলেন, দেশে চলমান উত্তেজনা কমাতে এবং সামাজিক অস্থিরতা এড়াতে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি সবাইকে আবেগ নিয়ন্ত্রণে রেখে সংলাপে ফিরে আসার আহ্বান জানান। তবে তার পদত্যাগ কার্যকর হতে সংসদীয় অনুমোদন প্রয়োজন হবে। নতুন সরকার গঠনের জন্য কিংবা আগাম নির্বাচন আয়োজনের জন্য সাংবিধানিকভাবে ৩০ দিন সময় নির্ধারিত রয়েছে।
বেলগ্রেডে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার পদত্যাগকে "অপরিবর্তনীয় সিদ্ধান্ত" হিসেবে উল্লেখ করেন। ভুকেভিচ জানান, সার্বিয়ার রাষ্ট্রপতি আলেক্সান্ডার ভুকিকের সাথে এক দীর্ঘ বৈঠকের পর তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। তিনি বলেন, "আমরা সবকিছু নিয়ে আলোচনা করেছি, এবং রাষ্ট্রপতি আমার যুক্তি গ্রহণ করেছেন। পরিস্থিতি যাতে আরও জটিল না হয় এবং সামাজিক উত্তেজনা বৃদ্ধি না পায়, তাই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"
ভুকেভিচ জানান, নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের আগ পর্যন্ত তিনি ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি উল্লেখ করেন যে, নোভি সাদ শহরে ছাত্র আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় একজন ছাত্র আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, ট্রেন স্টেশনের ছাউনি ধসের ঘটনাটি সরকারবিরোধীরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে। নোভি সাদের মেয়র মিলান ডুরিকও এরই মধ্যে তার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
এর আগে সোমবার সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তা অবরোধ করেন আন্দোলনরত ছাত্ররা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন স্থানীয় কৃষকরাও। এই অবরোধে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ অটোকোমান্ডা জংশন অচল হয়ে পড়ে, যা দেশের দৈনন্দিন কার্যক্রমে স্থবিরতা নিয়ে আসে। প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার ভুকিক আন্দোলনকারীদের সাথে বৈঠকে বসেন এই পরিস্থিতি সমাধানের লক্ষ্যে।
নোভি সাদ শহরের একটি রেলস্টেশনের ছাদ ধসের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ছাদ নির্মাণের সময় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে, যার ফলে গত ১৫ নভেম্বর এই দুর্ঘটনায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা দাবি করেন, দুর্নীতি না হলে এ ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটত না।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বজুড়ে ছাত্র আন্দোলন ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বিভিন্ন দেশের নেতৃত্বকে চাপে ফেলেছে। গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন। পরে সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের চাপে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ দেশ ছেড়ে রাশিয়ায় পালিয়ে যান। একই সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের বিরুদ্ধে সামরিক শাসন জারির অভিযোগে আন্দোলন শুরু হয়। অভিশংসিত হওয়ার পর আদালতের নির্দেশে তাকে গ্রেপ্তার করা হলেও দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটেনি।
repoter