
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায় দাখিল পরীক্ষায় নকলের অভিযোগে পাঁচ পরীক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে দায়িত্বে অবহেলা এবং নকল কাজে সহায়তার অভিযোগে পরীক্ষাকেন্দ্রের চারজন কক্ষ পরিদর্শক শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, উপজেলার নিশ্চিন্তপুর ডিএস কামিল মাদরাসা কেন্দ্রে বাংলা দ্বিতীয়পত্র বিষয়ের পরীক্ষা চলাকালীন এই ঘটনা ঘটে।
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন মাদরাসার পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে নিশ্চিন্তপুর ডিএস কামিল মাদরাসার শিক্ষার্থী শামীমা আফরিন ও তামান্না আক্তার, তেতৈয়া দাখিল মাদরাসার শিক্ষার্থী গাজী মো. জাহিদ হোসেন ও আরমান হোসেন এবং কোমরকাশা জামালিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার শিক্ষার্থী গাজী ইকরা আক্তার রয়েছেন।
ঘটনার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হেলাল চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, পরীক্ষা চলাকালে অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে আমরা পাঁচজন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছি। পাশাপাশি, দায়িত্বে অবহেলা এবং নকল কাজে সহায়তা করার কারণে চারজন শিক্ষককে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও নকলমুক্ত পরীক্ষা নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসন প্রতিটি কেন্দ্রে কঠোরভাবে মনিটরিং করছে। কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে পরীক্ষার পরিবেশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও আরও সচেতন হতে হবে যাতে আগেই এমন অনিয়ম রোধ করা যায়।
এদিকে, শিক্ষাবোর্ড এবং মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ থেকেও ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা যাতে ভবিষ্যতে এমন দায়িত্বে অবহেলা না করেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং প্রয়োজনে আরও তদন্ত করা হবে।
স্থানীয় অভিভাবকদের অনেকেই বলছেন, দাখিল পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে পরীক্ষার সময় নকলের প্রবণতা বাড়ছে, যা পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এক্ষেত্রে শিক্ষক, অভিভাবক এবং প্রশাসনের সমন্বিত ভূমিকা জরুরি বলে মনে করছেন তারা।
চলমান দাখিল পরীক্ষার বাকি অংশ যেন সুষ্ঠু ও নিয়মমাফিক হয়, সেজন্য প্রতিটি কেন্দ্রে প্রশাসনের উপস্থিতি আরও জোরদার করার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
পরীক্ষার পরিবেশ স্বচ্ছ রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো একযোগে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে নীতিমালা আরও কঠোর করার পরিকল্পনার কথাও উঠে এসেছে প্রশাসনিক পর্যায়ের আলোচনায়।
এদিকে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। সংশ্লিষ্ট বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তারা বলেছেন, নিয়ম অনুযায়ী এসব শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে পরবর্তী প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং প্রয়োজনে শুনানির ব্যবস্থা রাখা হতে পারে।
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে—পরীক্ষার সময় নিয়ম ভঙ্গ বা অসদুপায় গ্রহণ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। শিক্ষার মান রক্ষায় প্রশাসন, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সক্রিয় ভূমিকার ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে।
repoter