ছবি: প্রতীকী ছবি
বিসিএসসহ সব ধরনের সরকারি চাকরিতে আবেদন ফি ২০০ টাকা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সঙ্গে আলোচনা করে ‘বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা, ২০১৪’ সংশোধনের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, সরকারি চাকরিতে আবেদন ফি কমানোর এই সিদ্ধান্ত গত ২৭ নভেম্বর থেকে কার্যকর ধরা হয়েছে। আগে বিসিএস পরীক্ষার আবেদন ফি ছিল ৭০০ টাকা, যা এখন ২০০ টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। অন্যান্য সরকারি চাকরিতেও একইভাবে আবেদন ফি ২০০ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার কাঠামোতেও আনা হয়েছে পরিবর্তন। মৌখিক পরীক্ষার নম্বর ২০০ থেকে কমিয়ে ১০০ করা হয়েছে। ফলে এখন থেকে বিসিএস পরীক্ষার মোট নম্বর হবে ১০০০, যেখানে আগে ছিল ১১০০। এই পরিবর্তন প্রার্থীদের ওপর চাপ কমাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়াও সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়টি প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। পূর্বে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ছিল ৩০ বছর। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এটি বাড়িয়ে ৩২ বছর করা হয়েছে। বয়সসীমা বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত বেশ কয়েকটি তরুণ সংগঠন ও সুশীল সমাজের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গ্রহণ করা হয়েছে।
সরকারি চাকরির আবেদন ফি কমানোর পাশাপাশি বয়সসীমা বৃদ্ধি এবং পরীক্ষা কাঠামোয় এই পরিবর্তন দেশের চাকরিপ্রত্যাশী জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষভাবে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরকারের এই উদ্যোগ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “চাকরিপ্রার্থীদের আর্থিক এবং মানসিক চাপ কমানো সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় আবেদন ফি কমানোর মাধ্যমে সবার জন্য আবেদন প্রক্রিয়াটি আরও সহজ এবং সাশ্রয়ী করা হয়েছে।”
অন্যদিকে, চাকরিপ্রত্যাশীদের বয়সসীমা বৃদ্ধির কারণে যারা শিক্ষাজীবনে সামান্য বিলম্বিত হয়েছেন, তাদের জন্যও নতুন সুযোগ তৈরি হলো। বিশেষ করে যারা উচ্চশিক্ষার জন্য অধিক সময় ব্যয় করেছেন কিংবা করোনাভাইরাস মহামারির কারণে পিছিয়ে পড়েছেন, তারা এই সিদ্ধান্তের সুফল পাবেন।
মৌখিক পরীক্ষার নম্বর কমানোর বিষয়ে পিএসসির এক কর্মকর্তা বলেন, “মৌখিক পরীক্ষায় নম্বর কমানোর মূল উদ্দেশ্য হলো লিখিত পরীক্ষায় প্রার্থীদের যোগ্যতাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া। এটি প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ এবং সুষ্ঠু করবে।”
সরকারি চাকরিতে এই পরিবর্তনগুলো ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মহলে আলোচনা সৃষ্টি করেছে। তরুণ প্রজন্ম এবং চাকরিপ্রত্যাশীদের মধ্যে এই উদ্যোগ বেশ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকেই মনে করছেন, এটি তাদের জন্য একটি বড় সুযোগ এবং দীর্ঘমেয়াদে এই উদ্যোগ দেশের কর্মসংস্থান ব্যবস্থায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
চাকরিপ্রার্থী ও শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলছেন, “আবেদন ফি কমানোর ফলে আর্থিকভাবে দুর্বল প্রার্থীরা আরও বেশি আবেদন করার সুযোগ পাবেন। একই সঙ্গে বয়সসীমা বৃদ্ধি আমাদের মতো অনেকের জন্য নতুন করে প্রস্তুতির সুযোগ তৈরি করবে।”
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের নতুন এই বিধান দ্রুত কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে। এই পরিবর্তনগুলো তরুণ প্রজন্মকে আরও বেশি উৎসাহিত করবে এবং সরকারি চাকরির আবেদন প্রক্রিয়াকে সহজতর করবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
সরকারি চাকরির আবেদন ফি কমানোর এই সিদ্ধান্ত এবং বয়সসীমা বৃদ্ধির প্রভাব দেশের তরুণ সমাজে দীর্ঘমেয়াদে কী ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে আপাতত চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ইতিবাচক পরিবর্তন হিসেবে ধরা দিচ্ছে।
repoter