
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
ক্রিকেটারদের একে একে বিসিবি প্রাঙ্গণে উপস্থিত হওয়া ঘিরে সকাল থেকেই উত্তাপ ছড়ায় মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। ছুটির দিন হওয়ায় মাঠে তেমন কোনো খেলা না থাকলেও ক্রিকেটারদের এমন উপস্থিতি নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। উপস্থিত ছিলেন বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও, যাঁরা বিষয়টির গুরুত্ব আঁচ করে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছান।
সকালে বিসিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক দফা আলোচনা করেন উপস্থিত ক্রিকেটাররা। এরপর আলোচনায় যুক্ত হন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। সবশেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল, যিনি প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলতে গিয়ে হৃৎস্পন্দনের সমস্যায় ভুগে মাঠ ছাড়ার পর এই প্রথম সংবাদমাধ্যমের সামনে আসেন।
তামিম বলেন, বিসিবির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই কিছু বিষয় নিয়ে অসন্তোষ বিরাজ করছিল, যেগুলো নিয়ে আলোচনার দরকার ছিল। আজকের বৈঠক সেই প্রেক্ষাপটেই হয়েছে। যদিও আলোচনার ফল নিয়ে তিনি সরাসরি কিছু বলেননি, তবে তাঁর কণ্ঠে হতাশা ও ক্ষোভ স্পষ্ট ছিল।
বিসিবি সভাপতির সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গে তামিম জানান, কিছু ব্যাপারে বোর্ডের দৃষ্টিভঙ্গি ও ক্রিকেটারদের অনুভূতির মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। এসব ব্যবধান দূর করতে বোর্ডকেই আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে বলে তিনি মত দেন।
তামিম বলেন, ‘‘আমরা সবাই চাই দেশের ক্রিকেট আরও ভালো করুক। কিন্তু কখনো কখনো কিছু সিদ্ধান্ত বা আচরণ আমাদের মনোবল ভেঙে দেয়। যারা দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলে খেলছে, তাদের প্রতি যদি সম্মান দেখানো না হয়, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কী বার্তা পাবে?’’
এ সময় নিজের শারীরিক অবস্থা নিয়েও কথা বলেন তিনি। হার্ট অ্যাটাক–সদৃশ লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর যে মানসিক ধকলের মধ্য দিয়ে গেছেন, সেটি এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেননি বলে জানান তামিম। তিনি বলেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে, এমন একটা ঘটনা কাউকে না ঘটুক। আমি ভাগ্যবান যে বড় কিছু হয়নি। তবে সেটা আমাকে অনেক কিছু ভেবে দেখতে বাধ্য করেছে।’’
তিনি বোর্ড ও ক্রিকেটারদের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, একটি পেশাদার ক্রিকেট কাঠামোর মূল ভিত্তি হলো পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও স্বচ্ছতা। এই জায়গাগুলোতে ঘাটতি থাকলে মাঠের পারফরম্যান্সে তার প্রতিফলন পড়বে।
তামিমের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, আজকের আলোচনা এককভাবে কোনো সমাধান বয়ে আনেনি। বরং এটি একটি দীর্ঘসূত্রিতার অংশ, যা ভবিষ্যতে আরও আলোচনার প্রয়োজনীয়তা তৈরি করেছে।
এদিকে বিসিবির পক্ষ থেকে এই বৈঠক নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য না এলেও বোর্ডের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, ক্রিকেটারদের কিছু উদ্বেগ বোর্ড মনোযোগের সঙ্গে শুনেছে এবং ভবিষ্যতে একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরিতে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছে।
তবে তামিমের প্রকাশ্য ক্ষোভ ও বিসিবির আচরণ নিয়ে তাঁর অসন্তোষ নতুন করে ক্রিকেট প্রশাসনে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ক্রিকেটারদের সঙ্গে বোর্ডের সম্পর্ক কোনদিকে গড়ায়, সেটি দেখার জন্য এখন অপেক্ষায় পুরো দেশ।
repoter