ছবি: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস | ছবি: নেচার ডটকম
আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারের সেরা ১০ ব্যক্তিত্বের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) নেচারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, তালিকায় তার অবস্থান সপ্তম। প্রতিবেদনটি ‘দ্য রেভোলিউশনারি ইকোনমিস্ট হু বিকেম দ্য আনলাইকলি লিডার অব বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়।
নেচার প্রতিবেদনটি জানায়, ২০২৪ সালে বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে অবদান রাখা দশজনের মধ্যে একজন হিসেবে ড. ইউনূসকে এই মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। তিনি "নেশন বিল্ডার" বা জাতি নির্মাতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। ছয় দশকের কর্মজীবনে দারিদ্র্য বিমোচন ও নতুন ধারণা পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নেচারের মতে, গবেষণার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সমস্যা সমাধানে উদ্ভাবনী ধারণা প্রয়োগ করা তার কাজের মূল ভিত্তি।
তালিকার শীর্ষে রয়েছেন বিজ্ঞানী একহার্ড পেইক, যিনি কোয়ান্টাম অপটিক্স ও পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞান ক্ষেত্রে সেরা গবেষকদের একজন। ড. ইউনূস এই তালিকায় অবস্থান করেছেন তার নেতৃত্বগুণ এবং সমাজ পরিবর্তনে যুগান্তকারী অবদানের কারণে।
বাংলাদেশ পুনর্গঠনে ইউনূসের ভূমিকা
নেচারের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে আন্দোলনকারীরা ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ জানান। এরপর তার নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের কাজ শুরু হয়। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে একটি নতুন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
ড. ইউনূসের দীর্ঘকালীন সহকর্মী অ্যালেক্স কাউন্টস তার সম্পর্কে বলেছেন, "তিনি আশির দশকের প্রান্তে থাকলেও শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যন্ত সক্রিয়। তিনি একজন সহানুভূতিশীল মানুষ এবং চমৎকার যোগাযোগকারী।"
ড. ইউনূস ব্রিটিশ শাসিত চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেন এবং পরিবেশগত অর্থনীতির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নিকোলাস জর্জেসকু-রোগেনের অধীনে শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭০-এর দশকে তার উদ্ভাবিত ক্ষুদ্রঋণ মডেল দারিদ্র বিমোচনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি দারিদ্র্য দূরীকরণে বৈশ্বিক আন্দোলন শুরু করেন
বর্তমানে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশ পুনর্গঠনে কাজ করছে। জনগণের কাছে তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো দুর্নীতি দূরীকরণ, ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ এবং নাগরিক অধিকার রক্ষা। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ মুশফিক মোবারক বলেছেন, “আগস্ট অভ্যুত্থানের আগে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো শাসক দলের প্রভাবের অধীন ছিল। ড. ইউনূস এবং তার অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভা এখন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করে এসব প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করছেন।”
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে যে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, তা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে আরও স্থিতিশীল ও কার্যকর করবে বলে আশা করা হচ্ছে। জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় পুনর্গঠনের এই প্রক্রিয়া সফল হলে এটি বিশ্বব্যাপী একটি উদাহরণ তৈরি করবে।
repoter