
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর কার্যক্রম একপ্রকার থমকে গেছে। বৃহস্পতিবার সকালেও সচিবালয়ের অধিকাংশ দপ্তর তালাবদ্ধ দেখা গেছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকা সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রবেশ করলেও কোনো দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হয়নি।
বেলা ১১টা পর্যন্ত সচিবালয়ের বেশিরভাগ দপ্তর বন্ধ ছিল। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যার যার মতো অবস্থান নিয়ে বসে বা দাঁড়িয়ে সময় পার করছেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডের পর পুরো সচিবালয় বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে। কিছু এলাকায় জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও তা দাপ্তরিক কার্যক্রম চালানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়।
সচিবালয়ের ভেতরে থাকা দপ্তরগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগ রয়েছে। এসব বিভাগের দপ্তরগুলো অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে কার্যত অচল।
বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। তারা দুই মিনিটের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। মোট ১৯টি ইউনিট আগুন নেভাতে অংশ নেয়, যার মধ্যে ১০টি ইউনিট সরাসরি কাজ করেছে। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয় এবং দুপুরের দিকে পুরোপুরি নির্বাপিত হয়।
সকাল ৯টায় সচিবালয়ের সামনে এক ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এই অগ্নিকাণ্ড নাশকতা কি না, তা তদন্ত না করে বলা সম্ভব নয়। তিনি জানান, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল ব্রিফিংয়ে বলেন, কী কারণে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তিনি জানান, ভবনের ভেতরে গাড়ি প্রবেশে সীমাবদ্ধতা থাকায় বড় গাড়িগুলো দ্রুত প্রবেশ করতে পারেনি, যা আগুন নেভানোর কাজে কিছুটা বিলম্ব সৃষ্টি করে।
এই অগ্নিকাণ্ডের সময় দুঃখজনক একটি ঘটনা ঘটে। আগুন নেভানোর কাজের প্রাথমিক পর্যায়ে একজন ফায়ার ফাইটার পানির পাম্প থেকে পাইপ সংযোগ দিচ্ছিলেন। এ সময় রাস্তা পার হওয়ার মুহূর্তে দ্রুতগামী একটি ট্রাক তাকে আঘাত করে। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
অগ্নিকাণ্ডের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
repoter