
ছবি: ছবি : এএফপি
সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) দেশটিকে মুক্ত ঘোষণা করেছে। রবিবার সকালে এক টেলিগ্রাম বার্তায় তারা জানায়, স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ রাজধানী দামেস্ক থেকে পালিয়ে গেছেন। বিদ্রোহীদের ভাষায়, এটি একটি অন্ধকার যুগের সমাপ্তি এবং নতুন স্বাধীন সিরিয়ার সূচনা।
এইচটিএস তাদের ঘোষণায় বলে, আসাদ সরকারের দীর্ঘ পাঁচ দশকের শাসনের অবসানের পর বাস্তুচ্যুত এবং বন্দি সিরিয়ানরা এখন নিজ ঘরে ফিরে আসতে পারবেন। বিদ্রোহীদের নেতা মোহাম্মদ আল-জোলানি প্রতিশ্রুতি দেন, নতুন সিরিয়া হবে একটি ন্যায্য ও শান্তিপূর্ণ দেশ।
আসাদের পালিয়ে যাওয়া এবং বিদ্রোহীদের উদযাপন
রবিবার ভোরে একটি ব্যক্তিগত বিমানে করে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ অজানা গন্তব্যে পালিয়ে যান। যুদ্ধ পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানিয়েছে, দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করা ওই বিমানে আসাদ ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিমানে ওঠার আগে তাকে বিদায় জানান সরকারি বাহিনীর সদস্যরা।
হোমস শহর দখল করার পর বিদ্রোহী বাহিনী যখন রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ শুরু করে, তখনই আসাদ পালানোর সিদ্ধান্ত নেন। বিদ্রোহীরা দামেস্কে প্রবেশের খবরে উল্লাসে মেতে ওঠে। বিভিন্ন জায়গায় বিজয় উদযাপন করতে দেখা গেছে তাদের।
বিদ্রোহীদের সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান
বিদ্রোহী নেতা মোহাম্মদ আল-জোলানি বিদ্রোহী যোদ্ধাদের সাধারণ মানুষের প্রতি সদয় আচরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এক বার্তায় তিনি বলেন, যেসব শহর বা গ্রামে তারা প্রবেশ করবেন, সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে সহানুভূতিশীল হতে হবে। তিনি সরকারি বাহিনীকে অস্ত্র সমর্পণ করার পর সাধারণ ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দেন।
সেনাবাহিনীর পলায়ন ও সীমান্ত পরিস্থিতি
ইরাকের সীমান্তবর্তী আল-কায়িম শহরের মেয়র জানিয়েছেন, প্রায় দুই হাজার সিরিয়ান সেনা সীমান্ত পার হয়ে ইরাকে আশ্রয় নিয়েছেন। সিরিয়ার স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, দামেস্কের চারপাশ থেকে সরকারি সেনারা তাদের অবস্থান ছেড়ে সরে যাওয়ার পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
বিদ্রোহী বাহিনী পশ্চিম দামেস্কের গ্রামাঞ্চলে অগ্রসর হয়েছে। পূর্ব ঘোউতার বিভিন্ন শহর থেকেও সরকারি বাহিনী প্রত্যাহার করেছে। এর ফলে রাজধানীর বাজারগুলোতে খাদ্যপণ্য কেনার জন্য মানুষের ভিড় দেখা গেছে।
বিদ্রোহীদের মুক্তির স্বপ্ন
বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএস জানিয়েছে, তাদের লক্ষ্য একটি ন্যায্য এবং শান্তিপূর্ণ নতুন সিরিয়া প্রতিষ্ঠা করা। তারা দেশের জনগণের স্বাধীনতা, নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চায়।
দামেস্ক থেকে সরকারি বাহিনী প্রত্যাহারের পর এটি একটি নতুন যুগের সূচনা বলে অভিহিত করেছেন বিদ্রোহী নেতারা। বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএস এবং সিরিয়ার জনগণের জন্য এটি এক ঐতিহাসিক দিন হিসেবে চিহ্নিত হবে বলে তারা বিশ্বাস করে।
পরিস্থিতি নজরে রাখছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়
বিবিসি ও আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিরিয়ায় চলমান রাজনৈতিক সংকট ও আসাদের সরকার পতন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কাড়ছে। আসাদ সরকারের পতন সিরিয়ার রাজনীতিতে এক বড় পরিবর্তন আনতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিদ্রোহীদের এই মুক্তির ঘোষণা দেশটির ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে, তবে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তা নির্ভর করবে দেশটির ভেতরে এবং বাইরে বিভিন্ন পক্ষের কার্যক্রমের ওপর।
repoter