
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সময় দেশের দেশি-বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষে এসে এই ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩২ হাজার ২৮২ কোটি টাকায়। অর্থাৎ গত ১৫ বছরে ঋণের স্থিতি বেড়েছে ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। বিশেষ করে সরকারের শেষ তিন বছরে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে পৌনে ৭ লাখ কোটি টাকারও বেশি।
২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ঋণের স্থিতি ছিল ১১ লাখ ৪৪ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের ৩০ জুন এই অঙ্ক দাঁড়ায় ১৮ লাখ ৩২ হাজার ২৮২ কোটি টাকায়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ প্রকাশিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ ত্রৈমাসিক ঋণ বুলেটিনে উল্লেখ করা হয়েছে, শেষ তিন বছরে দেশি-বিদেশি ঋণ স্থিতি বেড়েছে ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা।
বুলেটিন অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি গত জুনে প্রথমবারের মতো ১০ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ১০ লাখ ২০ হাজার ২০৫ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ছিল ৭ লাখ ২৩ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। তিন বছরে অভ্যন্তরীণ ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা।
বিদেশি ঋণের পরিমাণও গত তিন বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২১ সালে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জুন শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ লাখ ১২ হাজার ৭৭ কোটি টাকায়। অর্থাৎ বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৩ লাখ ৯১ হাজার ৭২০ কোটি টাকা।
বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের নেওয়া অধিকাংশ বিদেশি ঋণ দর-কষাকষি ছাড়াই নেওয়া হয়েছে, যার ফলে ঋণ পরিশোধে চাপ বাড়ছে। তারা আরও জানান, বিদেশি ঋণ সাধারণত সস্তা ও দীর্ঘমেয়াদি হলেও সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার অভাবে ঋণের বোঝা বাড়ছে।
অর্থ বিভাগের প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকার প্রকৃত ঋণ নিয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ ৭৩ হাজার ১০৮ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণ ৮৩ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ ঋণের একটি বড় অংশ ব্যাংক খাত থেকে নেওয়া হয়েছে। গত অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে ৮৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে, সঞ্চয়পত্র এবং ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ৩৭ হাজার ১১৬ কোটি টাকার ঘাটতি দেখা গেছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঋণের সুদ পরিশোধ করতে সরকারকে ব্যয় করতে হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা, যা দেশের শিক্ষা বাজেটের থেকেও বেশি। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শিক্ষা বাজেটের আকার ৯৪ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ঋণের সুদ ব্যয় বেড়েছে ১৯ শতাংশ।
অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন শেষে সরকারের মোট ঋণের স্থিতি দেশের জিডিপির ৩৬ দশমিক ৩০ শতাংশে পৌঁছেছে। তিন বছর আগে এই হার ছিল ৩২ দশমিক ৪১ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ-জিডিপির হারকে নিরাপদ বলে বিবেচনা করলেও দেশের কর-জিডিপির হার এবং রিজার্ভের পরিমাণ কমে আসায় এই ঋণের হারকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
সিপিডি’র সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দেশের কর-জিডিপি হার মাত্র ৮ দশমিক ২ শতাংশ। একইসঙ্গে রিজার্ভ অর্ধেকে নেমে এসেছে। এ পরিস্থিতিতে ৩৬ দশমিক ৩০ শতাংশ ঋণ-জিডিপি হার দেশের অর্থনীতির জন্য চাপ তৈরি করছে। ঋণ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়াতে হবে এবং নতুন ঋণ গ্রহণে সতর্ক হতে হবে।’
সরকারের ঋণের বড় একটি অংশ এসেছে আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), এবং জাপান, চীন, রাশিয়া ও ভারতের মতো দেশ থেকে। এই ঋণের একটি বড় অংশ বাজেট সহায়তা এবং উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহৃত হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা আরও বলেন, ঋণ ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি এবং অদক্ষতার ফলে সরকারের ওপর দায়-দেনার চাপ বাড়ছে। জনগণের ওপর এ ঋণের বোঝা ক্রমশ বাড়ছে। ঋণ ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
repoter