ছবি: সংগৃহীত ছবি
বাংলাদেশের আর্থিক খাতে যে পরিমাণ অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা এবং দুর্নীতি হয়েছে, তা বিশ্বে বিরল বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, “এত বড় ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে, যা বাইরে থেকে কল্পনা করাও কঠিন। তবে দেশের মানুষের কর্মদক্ষতা দিয়ে এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।”
শনিবার (১৬ নভেম্বর) ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত পলিসি ডায়ালগ অন ফাইন্যান্সিয়াল অ্যান্ড ইকনমিক রিফর্মস ইন বাংলাদেশ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৈয়দ ফরহাত আনোয়ার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বিএসইসির কমিশনার ফারজানা লালারুখ এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন।
বিশৃঙ্খলার পরও কৃষি ও প্রবাসীদের অবদান
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, “দেশের উন্নয়নে কৃষকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। তবে অতীত সরকারের ভুল নীতির কারণে অন্তর্বর্তী সরকারকে সংস্কারের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। সবকিছু আমরা করতে পারব না, তবে জরুরি কিছু প্রাথমিক সংস্কার শুরু করেছি। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার রাজনৈতিক সরকারকে করতে হবে।”
মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি
মধ্যস্বত্বভোগীদের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, “দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের ভূমিকা রয়েছে। অনেক জায়গায় অনাবশ্যক চাঁদাবাজি চলছে। ডিলার পরিবর্তনের উদ্যোগ নিলে নতুন গোষ্ঠী এসে একই সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এদের সংখ্যা কমানোর চেষ্টা চলছে।”
ব্যাংক ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ
তিনি জানান, “অনেক ব্যাংক এখন আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। দেশের ব্যাংক খাত ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা একসময় প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ছিল। এখন কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরছে। তবে সব সংস্কারের জন্য সময় প্রয়োজন।”
অর্থ পাচার ও খেলাপি ঋণ
অর্থ পাচারের বিষয়ে তিনি বলেন, “অর্থ পাচার বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে কেউ অর্থ পাচার করলে শাস্তি পেতেই হবে। এছাড়া, খেলাপি ঋণ এখন আড়াই লাখ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা একসময় ছিল মাত্র ১৮ হাজার কোটি। খেলাপি ঋণের পেছনে কারা রয়েছে তা সবার জানা।”
বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে সমালোচনা
ভারতের আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে হওয়া বিদ্যুৎচুক্তি নিয়ে সমালোচনা করে তিনি বলেন, “চুক্তিতে আদানিকে কোনো কর দিতে হয়নি, বরং তাদের অর্থ পরিশোধের জন্য সময় দেওয়া হয়েছে।”
ড. সালেহউদ্দিন আরও বলেন, “অর্থনীতিতে কৃত্রিম উন্নয়নের প্রবণতা থেকে সরে এসে প্রকৃত উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের সক্ষমতা অসাধারণ, সঠিক নীতিমালা ও কার্যকর সংস্কারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক খাতকে পুনর্গঠন করা সম্ভব।”
repoter