ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
৩ এপ্রিল ২০২৫ , ০৩:০৩ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* চাঁদপুরের ৪০টি গ্রামে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ রবিবার * প্রতিযোগী না হয়ে প্রতিপক্ষ হলে ক্ষতিই নিজেদের: পঞ্চগড়ে সারজিস আলম * জুলাই বিপ্লবের শহীদ পরিবারদের পাশে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক * ভূমিকম্প বিধ্বস্ত মিয়ানমারে যাচ্ছে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর উদ্ধারকারী দল * শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে, সৌদিতে রবিবার ঈদ উদযাপিত হবে * “বাংলাদেশ কোরআনের উর্বর ভূমি” — পিএইচপি কোরআনের আলো প্রতিযোগিতায় ধর্ম উপদেষ্টার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা * চা শ্রমিকদের পাশে সিলেটের ডিসি — দুর্দশায় ত্রাণ নিয়ে হাজির প্রশাসন * সাত বছর পর পরিবারের সান্নিধ্যে ঈদ উদযাপন করছেন খালেদা জিয়া * মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ভয়াবহ ভূমিকম্পে শতাধিক মৃত্যুর আশঙ্কা * আগামীকাল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ২ ঘণ্টার লেনদেন

বাংলাদেশে আরব বসন্ত: রাশিয়ার সতর্কবার্তা এবং সরকারী প্রতিক্রিয়া

repoter

প্রকাশিত: ০৮:২৫:৪৭অপরাহ্ন , ১০ জানুয়ারী ২০২৫

আপডেট: ০৮:২৫:৪৭অপরাহ্ন , ১০ জানুয়ারী ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

২০২৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে আরব বসন্তের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করে একটি বিবৃতি দেয়। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এই বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে, যা আরব বসন্তের মতো হতে পারে।

জাখারোভা তার বিবৃতিতে শেখ হাসিনা সরকারকে পশ্চিমাদের কাছে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং বলেন, "১২ ও ১৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি জেলায় সরকারবিরোধীরা সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়, বাসে আগুন দেয় এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।" তিনি বলেন, এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে ঢাকায় অবস্থিত পশ্চিমা কূটনৈতিক মিশনগুলোর উসকানিমূলক কার্যকলাপের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে, বিশেষ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে।

জাখারোভা আরও বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ অন্যান্য চাপ প্রয়োগের সুযোগ গ্রহণ করতে পারে এবং এ ধরনের পদক্ষেপের ফলে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ক্ষেত্রেও আক্রমণ হতে পারে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, যদি যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের ফলাফলে সন্তুষ্ট না হয়, তাহলে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা হতে পারে।

রাশিয়ার এই বার্তায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে একটি দীর্ঘ আলোচনা শুরু হয়, তবে শেখ হাসিনা সরকার এই সতর্কবার্তাকে গুরুত্ব দেয়নি। বিশেষভাবে, তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন রাশিয়ার মন্তব্যে কোনো মনোযোগ দেননি। তিনি বলেন, "রাশিয়া কী বলেছে, সেটা আমাদের ইস্যু নয়, এ বিষয়ে তাদেরকেই জিজ্ঞেস করুন।"

এই প্রতিক্রিয়া থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, শেখ হাসিনা সরকার রাশিয়ার সতর্কবার্তা গ্রহণ করেনি। সেই সময় সোভিয়েত অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. শামসুদ্দিন আহমেদ মন্তব্য করেন যে, সরকারের এই আচরণ থেকে বুঝা যায় যে, তারা রাশিয়ার বার্তাকে গুরুত্ব দেয়নি।

এর কয়েক মাস পর, ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট, বাংলাদেশে একটি গণ-অভ্যুত্থান ঘটে, যা শেখ হাসিনা সরকারের পতনের কারণ হিসেবে দেখা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং কোটা সংস্করণের দাবির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর বলপ্রয়োগের ফলে আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে ওঠে এবং সরকারের পতন হয়। শেখ হাসিনাকে দেশ ত্যাগ করতে হয় এবং তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, শেখ হাসিনা সরকারের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণেই রাশিয়ার সতর্কবার্তাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তাদের মতে, সরকার মনে করেছিল রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব, যেমনটি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগেও শেখ মুজিবুর রহমানের সময় ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার যদি রাশিয়ার বার্তাকে গুরুত্ব দিতো, তবে তারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের দাবিগুলোর প্রতি মনোযোগী হতো এবং সেগুলো বিবেচনায় নিতো।

তবে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির এই ঘটনাকে অভ্যন্তরীণ কারণে সৃষ্টি হওয়া পরিস্থিতি হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, "এটি মূলত অভ্যন্তরীণ সমস্যার ফলস্বরূপ ঘটেছে, এবং বাইরের কোনো প্রভাব বিশেষভাবে সাহায্য করেনি। ভারতও কিছু করতে পারেনি, কারণ তারা দ্রুত পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে পারেনি।" তিনি মনে করেন, সরকার দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি ভুলভাবে পরিচালনা করেছে এবং এর ফলস্বরূপ পরিস্থিতি অস্থির হয়ে ওঠে।

রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সম্প্রতি আন্তর্জাতিক আলোচনায় এসেছে। বিশেষত, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এই প্রকল্পটির বিপুল ঋণ এবং ব্যয়ের কারণে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের চাপ আরও বাড়তে পারে, বলে অর্থনীতিবিদরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের সম্পর্ক বিশেষভাবে ঘনিষ্ঠ ছিল এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সম্পর্কের বৈরিতার প্রেক্ষাপটে এই বার্তা দেওয়া হয়েছিল। তিনি মনে করেন, রাশিয়ার এই সতর্কবার্তা যথাযথ গোয়েন্দা তথ্য বা নিরপেক্ষ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে দেওয়া হয়নি, বরং এটি তাদের স্বার্থের জায়গা থেকে দেওয়া একটি বার্তা।

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রাশিয়ার কূটনীতিকদের তীব্র বক্তব্য এবং পরবর্তীতে ৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশন বিষয়ক কো-অর্ডিনেটর জন কিরবির "ক্ল্যাসিক রাশান প্রোপাগান্ডা" মন্তব্য, রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে।

পরবর্তীতে, ৭ ডিসেম্বর ঢাকা প্রেস ক্লাবে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মন্টিটস্কির কাছে জন কিরবির বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "আমরা কোনো বেআইনি কর্মের বিরুদ্ধে থাকব এবং এমন কোনো কঠিন পরিস্থিতি ঘটবে না।"

এদিকে, ২০২৩ সালের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে এবং বর্তমানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরবর্তী ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং ভূরাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

repoter