ছবি: ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা | সংগৃহীত ছবি
ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান সফরের পরিকল্পনা করছেন। রাজকীয় এই সফর ব্রিটেনের জন্য কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। রাজা চার্লস বর্তমানে শারীরিক অবস্থার উন্নতির পর ধীরে ধীরে তার দায়িত্ব ও কার্যক্রমে ফিরে আসছেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিরর শুক্রবার (২২ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই সফরের মাধ্যমে ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশের সঙ্গে ব্রিটেনের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা চালানো হবে। যদিও সফরের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তবে এটি বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান সফরকে অন্তর্ভুক্ত করে হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সফরটি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দপ্তর এই সফরের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রিটিশ রাজা চার্লসের সফর বাংলাদেশের জন্য কেবল ঐতিহাসিক সৌজন্যের প্রতীক নয়, বরং এটি অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। সফরটি বাংলাদেশ-ব্রিটেন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
রাজা তৃতীয় চার্লস ক্যানসারের চিকিৎসা শেষে এখন শারীরিকভাবে অনেকটাই সুস্থ। চিকিৎসা শেষে তিনি ধীরে ধীরে রাজকীয় কার্যক্রমে ফিরে আসছেন। তার এই সফরের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
এর আগে, ২০০৬ সালে ক্যামিলাকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তান সফর করেছিলেন রাজা চার্লস। তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ব্রিটেনের ঐতিহাসিক সম্পর্ক এই সফরকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।
রাজা চার্লসের এই সফর ব্রিটেনের জন্য একটি কৌশলগত বার্তা বহন করবে। ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ে ব্রিটেনের বৈশ্বিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে ভারতীয় উপমহাদেশের তিন দেশ সফরকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সফরের মাধ্যমে ব্রিটেনের পক্ষে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু হবে।
বাংলাদেশ সফরের পাশাপাশি ভারত ও পাকিস্তান সফরের পরিকল্পনাও রয়েছে। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক কিছু উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। তা সত্ত্বেও, এই সফর ব্রিটেনের দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থান পুনর্বিন্যাসের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজা চার্লসের ভারত সফর বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে। ভারতের সঙ্গে ব্রিটেনের ঐতিহাসিক সম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব ভবিষ্যতে উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হতে পারে।
রাজা চার্লসের বাংলাদেশ সফর শুধু কূটনৈতিক সম্পর্কই নয়, বরং উন্নয়ন সহযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্বের সম্ভাবনা এই সফরের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী হতে পারে।
কূটনীতিকরা আশা করছেন, রাজা চার্লসের এই সফর বাংলাদেশে ব্রিটেনের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে নতুন সুযোগ তৈরি করবে।
বিশ্ব মঞ্চে ব্রিটেনের ভূমিকা সুসংহত করতে রাজা এবং রানির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করতে এই সফর কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজা চার্লসের এই সফরের মাধ্যমে ব্রিটেন একটি শক্তিশালী বার্তা দিতে সক্ষম হবে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
সফরের আগে কিছু উদ্বেগও রয়েছে। বিশেষ করে ভারতের নীতিগত অবস্থান এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ব্রিটিশ প্রশাসনের চিন্তা রয়েছে। তবে রাজা চার্লসের সফরটি দক্ষিণ এশিয়ায় ব্রিটেনের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই সফরের মাধ্যমে ব্রিটেনের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, এবং অর্থনৈতিক প্রভাব নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে। বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তান—এই তিন দেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ব্রিটেনের জন্য দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন সুযোগের দ্বার উন্মোচন করবে।
repoter