ছবি: টিংকুর রহমান বিশ্বাস। ছবি : সংগৃহীত
পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি টিংকুর রহমান বিশ্বাস ১১ ডিসেম্বর, বুধবার, রাজ্যটির রাজধানী কলকাতায় দলের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের দখল নেওয়ার হুমকি দেন। তার এই বিতর্কিত বক্তব্যটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় এবং এতে প্রবল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
সংবাদ সম্মেলনে টিংকুর রহমান বলেন, "১৫ মিনিটের জন্য বর্ডার খুলে দেওয়া হোক, পশ্চিমবাংলার সংখ্যালঘু মুসলিমরা বাংলাদেশ দখল করে নেবে।" তিনি আরও বলেন, "আমাদের জন্য পুলিশ বা বাহিনীর সাহায্য লাগবে না, আমরা নিজেদের উদ্যোগে এই কাজটি করতে পারব।" তার এই বক্তব্যে এমন কিছু মন্তব্য ছিল, যা অনেকেই ক্ষোভের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন।
এই মন্তব্যটি সামনে আসার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার দলের নেতারা একাধিক বার বাংলাদেশ সম্পর্কিত মন্তব্যে সতর্ক থাকার পরও টিংকুর রহমানের বক্তব্য তা অমান্য করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত সোমবার রাজ্যের সমস্ত নেতাদের বাংলাদেশ বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু এর পরের দিনই তৃণমূলের জেলা পর্যায়ের এই নেতা বাংলাদেশ নিয়ে তার উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন।
টিংকুর রহমান বলেন, "বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ, যার জন্ম দিয়েছে ভারতবর্ষ। ১৯৭১ সালে সাত লাখ শরণার্থীকে ভারত নিজেদের দেশে আশ্রয় দিয়েছিল, খাওয়াচ্ছিল, এখন সেই বাংলাদেশ আমাদের জাতির পিতাকে চেনে না, তার মূর্তি ভাঙে। তাই তাদের থেকে আর কী আশা করা যায়?" এই মন্তব্যটি বাংলাদেশে রীতিমতো বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
এছাড়া, টিংকুর রহমান আরও বলেন, "বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতা আমাদের মানবিক মুখ্যমন্ত্রীকে তুচ্ছ করেছেন। আমরা সংখ্যালঘু মুসলিমরা একত্রিত হয়ে যথেষ্ট শক্তিশালী।" তার এই কথাগুলো তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের প্রতি দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনার বিরোধিতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মানার কথা ঘোষণা করেছিলেন এবং তার দলের নেতাদের বাংলাদেশ সম্পর্কিত মন্তব্য থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে তার দলের এক জেলা পর্যায়ের নেতা এই নির্দেশনা উলঙ্ঘন করলেন, যা রাজ্যের রাজনীতি ও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মধ্যে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
এদিকে, মালদা জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের এই নেতার এমন মন্তব্যের পর রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধী দলগুলো তার বক্তব্যকে অযাচিত ও উস্কানিমূলক বলে মন্তব্য করেছে এবং রাজ্যের শাসক দলকে এ ধরনের মন্তব্যের জন্য জবাবদিহি করতে বলেছে। তাদের দাবি, এই ধরনের মন্তব্য দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও নিরাপত্তাকে বিপন্ন করতে পারে।
এখন দেখার বিষয় হলো, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্ব এই ঘটনা সম্পর্কে কী ব্যবস্থা নেয় এবং রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশে এর প্রভাব কতটা বিস্তৃত হয়।
repoter