ছবি: আদানিকে বিদ্যুতের দাম কমাতে বলবে বাংলাদেশ - সংগৃহীত
বাংলাদেশ সরকার আদানির সাথে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি পুনর্বিবেচনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং যদি চুক্তিতে কোনো অসংগতি পাওয়া যায় তবে তা নিয়ে আলোচনা করবে। তবে, দুর্নীতি বা ঘুষের মতো অনিয়ম প্রমাণিত হলে চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ বিষয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গত রোববার রয়টার্সের সাথে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান। তিনি বলেন, সরকার চায় চুক্তি বাতিল না করলেও, বিদ্যুতের দাম কমাতে কিছু দরকষাকষি করবে।
ফাওজুল কবির বলেন, “আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তিটি যদি বাতিল না হয়, তবে বাংলাদেশের জন্য বিদ্যুতের দাম কমাতে কিছু আলোচনা হতে পারে। বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের শুল্ক ছাড় বা অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার পরও, বাংলাদেশ তা থেকে উপকৃত হচ্ছে না।” তিনি আরও জানান, যদি কোনো দুর্নীতি বা অনিয়ম প্রমাণিত হয় তবে সরকার তা নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে, আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে মার্কিন আদালতে দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও, ফাওজুল কবির মনে করেন, এসব অভিযোগ বাংলাদেশের সাথে বিদ্যুৎ চুক্তিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না। তিনি বলেন, “যতটুকু আমরা জানি, এই অভিযোগগুলি বাংলাদেশের চুক্তির সাথে সম্পর্কিত নয়। আমাদের চুক্তি নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী চলবে।”
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আদানি গ্রুপ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ১৪.০২ টাকায় বিক্রি করেছে, যা অন্যান্য ভারতীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের তুলনায় অনেক বেশি। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আদানির বিদ্যুৎ ইউনিটপ্রতি ১২ টাকায় নেমে এলেও তা এখনও ভারতের অন্যান্য বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের চেয়ে অনেক বেশি। অন্যদিকে, বাংলাদেশের বিদ্যুতের খুচরা মূল্য ৮.৯৫ টাকা, যার ফলে সরকার প্রতি বছর ৩২০ বিলিয়ন টাকা ভর্তুকি প্রদান করছে।
ফাওজুল কবির জানিয়েছেন, “সরকার চায় বিদ্যুতের দাম কমিয়ে খুচরা মূল্যটির নিচে নামাতে, তবে শুধু আদানির বিদ্যুৎ নয়, সামগ্রিকভাবে বিদ্যুতের দাম কমাতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই, এই সমস্যা সমাধান করে এমন একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক, যাতে ভর্তুকির প্রয়োজন না হয়।”
তবে, সরকারের এই উদ্যোগের পরেও, আদানি গ্রুপের সাথে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত থাকবে, উল্লেখ করেছেন ফাওজুল কবির। তিনি বলেন, আদানি সম্প্রতি বিল পরিশোধে বিলম্ব হওয়ার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ হ্রাস করেছিল, তবে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট স্থানীয় সক্ষমতা রয়েছে। তিনি জানান, “আমাদের দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো অনেকাংশে সক্ষম, তবে কিছু সমস্যার কারণে আমরা এখনও কিছু কেন্দ্রের পূর্ণ উৎপাদন সক্ষমতায় পৌঁছতে পারিনি।”
ফাওজুল কবির আরও বলেছেন, “এমনকি আদানি গ্রুপ বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিলেও, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনো সমস্যা হয়নি। আমরা কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীকে ব্ল্যাকমেইল করতে দেবো না।”
২০১৭ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার আদানি গ্রুপের সাথে একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষর করে, যার আওতায় ভারতীয় ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডা থেকে ২৫ বছর ধরে বিদ্যুৎ ক্রয় করবে বাংলাদেশ। তবে, এই চুক্তি নিয়ে নানা অসংগতি রয়েছে, যেগুলোর কারণে বাংলাদেশের সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করছে। বিশেষ করে, চুক্তির শর্তগুলোর কারণে প্রায় তিন লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, গত রবিবার এক সাক্ষাৎকারে আদানি গ্রুপ জানিয়েছে যে, তারা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে চুক্তি পুনর্বিবেচনার কোনো ইঙ্গিত পায়নি। আদানি গ্রুপের এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা বিপিডিবি এবং বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি এবং তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে শিগগিরই আমাদের বকেয়া পরিশোধ করা হবে।”
repoter