
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী বন্দরে দিনে-রাতে অবাধে তেল চুরি চলছে। রাতের আঁধারে জাহাজ থেকে হাজার হাজার লিটার ডিজেল ও অকটেন চুরি করে কালোবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এই চুরির সঙ্গে জড়িত শক্তিশালী চক্র, যার মধ্যে রয়েছেন জাহাজের সারেং, তেল ডিপোর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। বছরে সরকারের ক্ষতি হচ্ছে শত শত কোটি টাকা। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের নাকের ডগায় এই লুটপাট চললেও তা রোধে কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
বাঘাবাড়ী বন্দরে প্রতিদিন গড়ে ৩৬ লাখ লিটার জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। তবে নাব্য সংকটের কারণে জাহাজগুলো পূর্ণ ধারণক্ষমতায় তেল পরিবহন করতে পারে না। এ সুযোগে চোরাই চক্র প্রতিদিন ৫০ থেকে ৭০ হাজার লিটার তেল চুরি করে। মাসে এই পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫ থেকে ২০ লাখ লিটার, আর বছরে দুই থেকে আড়াই কোটি লিটার। চোরাই তেল প্রতি লিটারে সরকারি মূল্যের চেয়ে ১০ থেকে ১৫% কম দামে বিক্রি হয়। বছরে এই চুরির বাজারমূল্য প্রায় ৭০০ কোটি টাকা।
চুরির পদ্ধতি অত্যন্ত পরিকল্পিত। জাহাজের সারেং ও ক্রুরা পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল সরিয়ে ছোট নৌকায় তোলেন। এরপর সেগুলো স্থানীয় গুদামে মজুত করা হয়। পরে সেই তেল পাইকারি দরে বিক্রি করা হয়। চক্রের সদস্যরা জাহাজের গেজ ও নথিপত্রে কারসাজি করে তেলের পরিমাণ কম দেখান, যাতে চুরির বিষয়টি ধরা না পড়ে। এমনকি ট্যাঙ্কারে পানি মিশিয়েও তেলের পরিমাণ বেশি দেখানো হয়।
চক্রের প্রধান হিসেবে চিহ্নিত ল্যাংড়া স্বপন ও তাঁর সঙ্গীরা এই অপকর্মে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। স্থানীয় ১০ গ্রামের প্রায় ৪০ জন এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত। চুরি করা তেল স্থানীয় কালোবাজারে বিক্রি হয়, যা কৃষি ও পরিবহন খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। চক্রের এক সদস্য জানান, পুলিশ ও প্রশাসনের কিছু অসাধু ব্যক্তির সঙ্গে তাদের গোপন যোগাযোগ রয়েছে, যা এই চুরিকে নির্বিঘ্ন করে রেখেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই চুরি তাদের কাছে ওপেন সিক্রেট। তবে চক্রের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। এক নৌকার মাঝি নাম প্রকাশ না করে বলেন, "এই কাজ সব রাতেই হয়। আমরা জানলেও কাউকে বলার সাহস করি না। যারা এসব কাজে জড়িত তারা প্রভাবশালী। টের পেলে জানে মেরে ফেলবে।"
শাহজাদপুর থানার ওসি আসলাম আলী চোরাই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযানের ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। তিনি জানান, তেল চুরির কোনো অভিযোগ তাঁর কাছে নেই। অন্যদিকে বাঘাবাড়ী তেল ডিপোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম সাদেকীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, "বিষয়টি স্পর্শকাতর। উপজেলা প্রশাসনের এ ক্ষেত্রে সরাসরি হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্ব পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের। তারা অভিযান চালালে উপজেলা প্রশাসন সহযোগিতা করে। তবে এক বছরে এ ধরনের কোনো অভিযান হয়নি।"
এই চুরি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে সরকারের ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
repoter