ছবি: এহতেশামুল হক ভোলা ও বাবুল আক্তার
মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার অন্যতম আসামি এহতেশামুল হক ভোলা রবিবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে উপস্থিত হয়ে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছেন। তিনি দাবি করেন, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তাকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করেছে। সেই স্বীকারোক্তিতে বাবুল আক্তারকে তার স্ত্রী মিতুর হত্যার জন্য দায়ী করা হয়।
“আমি নির্দোষ”: ভোলার দাবি
ভোলা বলেন, “আমি নির্দোষ। পিবিআই আমাকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে এবং মানসিক চাপে ফেলে বাবুল আক্তারকে ফাঁসানোর জন্য জোর করেছে। তৎকালীন পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের চক্রান্তে বাবুল আক্তারকে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে।”
ভোলা আরও অভিযোগ করেন, বনজ কুমারের সঙ্গে বাবুলের প্রশাসনিক দ্বন্দ্ব ছিল। ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারের এক স্বর্ণের গুদামে অভিযান চালানোর ঘটনায় তাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। ভোলার ভাষ্যমতে, এই দ্বন্দ্বের প্রতিশোধ হিসেবে বনজ কুমার বাবুলকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করেন।
“ঘুষ ও চাপের শিকার আমি”
ভোলা জানান, নগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন এএসসি মো. কামরুজ্জামান তার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। এছাড়া পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তাদের প্রায় এক কোটি টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে। পিবিআই-এর চাপে বাবুল আক্তারকেই মিতু হত্যার মূল অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করতে বাধ্য করা হয়েছে।”
“পুনরায় সাক্ষ্য গ্রহণ চাই”
ভোলা মামলাটির সুষ্ঠু বিচার দাবি করে পুনরায় সাক্ষ্য গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আমাদের বিশ্বাস, ন্যায়বিচার পাব। ইনশাআল্লাহ।”
বাবুল আক্তারের মুক্তি পিছিয়ে গেল
এদিকে, হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেও রবিবার চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পাননি আলোচিত সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার। বিকেল পাঁচটার দিকে তার মুক্তির কথা থাকলেও তা স্থগিত হয়।
২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রামের জিইসি এলাকায় ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দেওয়ার পথে মাহমুদা খানম মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। পরদিন বাবুল আক্তার নিজে বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন।
২০২১ সালের ১২ মে পিবিআই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। একই দিনে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাবুলকে প্রধান আসামি করে দ্বিতীয় মামলা দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জের ধরে বাবুল আক্তার তার স্ত্রীকে হত্যা করেছেন।
মামলার অগ্রগতি
মামলাটি বর্তমানে চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। এ পর্যন্ত ৯৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। বাবুল আক্তার দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে রয়েছেন এবং মামলা নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
মিতু হত্যার এই মামলায় নতুন করে ভোলার দাবিগুলো আরও জটিলতা সৃষ্টি করেছে। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, সত্যিই কি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে?
repoter