
ছবি: আশুলিয়ায় বন্ধ ২৫ কারখানা
সরকার ঘোষিত বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধির ৪ শতাংশ হার প্রত্যাখ্যান করে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির দাবিতে আশুলিয়ার পোশাক শ্রমিকরা টানা কর্মবিরতিতে অবস্থান করছেন। শ্রমিকদের এই আন্দোলনের ফলে শিল্পাঞ্চলের অন্তত ২৫টি কারখানার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। বিশৃঙ্খলা এড়াতে বৃহস্পতিবার ছয়টি কারখানা বন্ধ এবং আরও আটটি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূইয়া নিশ্চিত করেছেন, নাসা গ্রুপ, ট্রাউজার লাইন, আল মুসলিমসহ বেশ কয়েকটি কারখানা বন্ধ রয়েছে। সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা কারখানার মধ্যে রয়েছে নিউ এইজ গার্মেন্টস, নিউ এইজ অ্যাপারেলস, মেডলার অ্যাপারেলস এবং ব্যান্ডো ডিজাইন। এ ছাড়া আরও কিছু কারখানার শ্রমিকরা উপস্থিতি নিশ্চিত করার পরেও কাজ না করে বেরিয়ে গেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারখানাগুলো হলো নীট এশিয়া লিমিটেড, নেক্সট কালেকশন লিমিটেড, ডেকো ডিজাইন লিমিটেড, শারমীন ফ্যাশন, ইথিকাল গার্মেন্টস, আগামী ফ্যাশন এবং ক্রসওয়্যার।
সরজমিনে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করলেও কয়েক ঘণ্টা অবস্থানের পর উৎপাদন বন্ধ রেখে কর্মবিরতি শুরু করেন। ফলে কারখানাগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছে। নাসা গ্রুপের একাধিক কারখানাসহ মোট ছয়টি কারখানার কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্যদিকে নিউ এইজ গার্মেন্টস, ব্যান্ডো ডিজাইন, এবং মেডলার অ্যাপারেলসের মতো কারখানাগুলোতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলমান মূল্যস্ফীতি ও উচ্চ জীবনযাত্রার ব্যয় মোকাবিলায় বর্তমান বেতন কাঠামো পর্যাপ্ত নয়। তারা দাবি করেছেন বাৎসরিক বেতন ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি, অর্জিত ছুটির টাকা মাসিক ভিত্তিতে পরিশোধ, এবং ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ। এসব দাবিতে শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কর্মবিরতিতে নেমেছেন।
শিল্পাঞ্চলের শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থায় শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে এই আন্দোলন জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে আন্দোলন শান্তিপূর্ণ রয়েছে এবং কোনো ধরনের বড় বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি।
আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূইয়া বলেছেন, শ্রমিকদের দাবির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। তিনি জানান, শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন পরিচালনার ক্ষেত্রে পুলিশ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে প্রচুর সংখ্যক গার্মেন্টস কারখানা দেশের পোশাক শিল্পে অবদান রেখে চলেছে। তবে শ্রমিকদের এই আন্দোলনের ফলে শিল্পাঞ্চলে উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে এর নেতিবাচক প্রভাব শিল্প এবং অর্থনীতির ওপর পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
repoter