ছবি: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস - ছবি : সংগৃহীত
ড. ইউনূস বলেন, "আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে স্বাগত জানানো হবে, তবে তা তখনই সম্ভব যখন তাদের অপরাধে জড়িতদের বিচার শেষ হবে। অন্য যেকোনো দলের মতো তারাও সমান স্বাধীনভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে।"
তিনি আরও যোগ করেন, "আমরা তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মঞ্চে লড়াই করব।"
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান ও সেখান থেকে বক্তব্য দেয়ার বিষয়টি নিয়ে ড. ইউনূস তার মতামত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "শেখ হাসিনাকে ভারত শুধু আশ্রয়ই দেয়নি, বরং তিনি সেখান থেকে এমন বক্তব্য দিচ্ছেন যা আমাদের জন্য সমস্যা তৈরি করছে। তার বক্তব্য শোনামাত্রই মানুষ অখুশি হয়। এটি আমাদের বন্ধ করতে হবে।"
ড. ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনার পতনের পর যখন তাকে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়ার আহ্বান জানানো হয়, তখন তিনি প্রথমে তা নিতে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানে নিহত মানুষ ও তাদের পরিবারের কথা ভেবে তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
"প্রথমে আমি এই দায়িত্ব এড়াতে চেয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম, অন্য কাউকে খুঁজে বের করুন। কিন্তু পরে আমি বললাম, আপনারা যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব," বলেন ড. ইউনূস।
টাইম ম্যাগাজিনে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ড. ইউনূসের সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে ড. ইউনূসের ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং বিশ্বব্যাংকের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।
তবে ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় এলে তা বাংলাদেশে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ড. ইউনূস। এরই মধ্যে গত ৩১ অক্টোবর ট্রাম্প বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর কথিত নির্যাতন নিয়ে একটি পোস্ট করেছেন। এতে বোঝা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ ও ভারতীয়-আমেরিকানরা ট্রাম্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে চাইছে।
ড. ইউনূস বলেন, "ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী, আমরাও ব্যবসার অংশ। আমরা তাকে বলছি না আমাদের অনুদান দিন। বরং আমরা একটি শক্তিশালী ব্যবসায়িক সম্পর্ক চাই।"
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যেসব অর্থ পাচার হয়েছে, সেগুলো ফেরত আনার চেষ্টা করছেন বলে জানান ড. ইউনূস। ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন এ বিষয়ে তাকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, "যেসব দেশ থেকে অর্থ পাচার হয়েছে, তারা আমাদের সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।"
নির্বাচনের আগে দেশের প্রশাসনিক ও সামাজিক সংস্কারকে অগ্রাধিকার দেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, "এই অভ্যুত্থানের মূল হলো সংস্কার। এ কারণেই আমরা একে বলছি ‘বাংলাদেশ ২.০’। সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়ন না হলে তারা ধৈর্য্যহারা হয়ে বলতে পারে আওয়ামী লীগের সময় ভালো ছিল।"
মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে ড. ইউনূস বলেন, "আমরা এ দেশকে নতুনভাবে গড়তে চাই। এটি শুধু একটি নির্বাচন নয়, বরং একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা।"
repoter