ছবি: মাটি খুড়ে উত্তোলন করা হচ্ছে সৈনিকদের দেহাবশেষ।
কুমিল্লার ঐতিহাসিক ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন নিহত জাপানের ২৪ সৈনিকের দেহাবশেষ ৮১ বছর পর নিজ দেশে পাঠানো হচ্ছে। ইতোমধ্যেই জাপান থেকে আগত সাত সদস্যের একটি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল দেহাবশেষ উত্তোলনের কাজ শুরু করেছেন। বিশেষজ্ঞরা জানান, সমাধি থেকে মাথার খুলি, শরীরের হাড়সহ বিভিন্ন দেহাংশ পাওয়া গেছে। বিশেষভাবে ২৮ বছর বয়সী এক তরুণ সৈনিকের মাথার খুলিতে বুলেটের চিহ্নও পাওয়া গেছে।
ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রির ইতিহাস
কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় অবস্থিত এই সিমেট্রি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে নিহত বিশ্বের ১৩টি দেশের ৭৩৭ জন সৈনিক এখানে সমাহিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১৭২ জন ইসলাম ধর্মাবলম্বী, ২৪ জন বৌদ্ধ, ২ জন হিন্দু এবং বাকিরা ছিলেন খ্রিষ্টান।
সমাধিস্থ সৈনিকদের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ৩৫৭ জন, কানাডার ১২ জন, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের ১২ এবং ৪ জন, দক্ষিণ আফ্রিকার ১ জন, অবিভক্ত ভারতের ১৭১ জন, রোডেশিয়ার ৩ জন, পূর্ব আফ্রিকার ৫৬ জন, পশ্চিম আফ্রিকার ৮৬ জন, মিয়ানমারের ১ জন, বেলজিয়ামের ১ জন, জাপানের ২৪ জন এবং পোল্যান্ডের ১ জন রয়েছেন।
দেহাবশেষ উত্তোলনের কাজ
কমনওয়েলথ গ্রেভইয়ার্ড কমিশনের তত্ত্বাবধানে ফরেনসিক দল ২৪ জন জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ উত্তোলনের কাজ করছে। বাংলাদেশি স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক শুরু থেকেই জাপানি দলের সহযোগিতা করছেন।
তিনি জানান, ‘‘এই সমাধিগুলো প্রায় ৮১ বছরের পুরোনো। এখনও পর্যন্ত ১০ জনের দেহাবশেষ উত্তোলন করা হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তিন থেকে ছয় ফুট গভীর খননের পর দেহাবশেষ পাওয়া যাচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি যত্নসহকারে সব কিছু উত্তোলন করার।’’
কমনওয়েলথ গ্রেভইয়ার্ড কমিশনের কান্ট্রি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর আবদুর রহিম জানান, ‘‘ফরেনসিক দল গত বুধবার থেকে কাজ শুরু করেছে এবং ২৪ নভেম্বরের মধ্যে কার্যক্রম শেষ হবে।’’
যুদ্ধের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা
ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি প্রতি বছরের নভেম্বর মাসে কমনওয়েলথভুক্ত দেশের হাইকমিশনার ও প্রতিনিধিদের শ্রদ্ধার স্থান। এ বছরের ৯ নভেম্বরও ১৩টি দেশের কূটনীতিকরা এই সমাধিস্থলে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
৮১ বছর পর দেহাবশেষ উত্তোলনের মাধ্যমে জাপানি সৈনিকদের ইতিহাসের নতুন অধ্যায় উন্মোচিত হলো। যুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া এই বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁদের দেহাবশেষ নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ সময়ের এক অসামান্য সাক্ষ্য হয়ে থাকবে।
repoter