ছবি: ছবি: সংগৃহীত
৫ আগস্ট বঙ্গভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের উপস্থিতি ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন তথ্য সামনে এসেছে। নিজের দেখা অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন কৃষিবিদ শেখ মুহাম্মদ মাসউদ, যিনি ওইদিন বঙ্গভবনে উপস্থিত ছিলেন। তার বর্ণনা একটি ফেসবুক পোস্টে তুলে ধরার পর বিষয়টি আরও আলোচনায় এসেছে।
আইনজীবী ও লেখক অধ্যাপক আসিফ নজরুল তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে মাসউদের পোস্টটি শেয়ার করেন, যা আরও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
সেনা সদর থেকে বঙ্গভবন: যাত্রার প্রেক্ষাপট
শেখ মুহাম্মদ মাসউদের ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ৫ আগস্ট তিনি সেনা সদর এবং পরবর্তীতে বঙ্গভবনে যাওয়ার সুযোগ পান। তিনি দাবি করেন, ওইদিন সেনা সদর দফতরে সেনাপ্রধান বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের দেশের সংকট মোকাবিলায় সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, জামায়াতের ডা. শফিকুর রহমান, জাতীয় পার্টির জিএম কাদের, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, গণসংহতির জোনায়েদ সাকি, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা ফায়জুল্লাহসহ আরও অনেকে।
মাসউদ জানান, প্রথমে বেশিরভাগ নেতা বঙ্গভবনে যেতে অনাগ্রহ দেখালেও পরে সেনাপ্রধানের অনুরোধে রাজি হন। তবে বঙ্গভবন যাওয়ার সময় অনেক নেতা ভয়ে আতঙ্কিত ছিলেন।
বঙ্গভবনে পৌঁছানোর পর
বঙ্গভবনে যাওয়ার পর রাজনৈতিক নেতা এবং সমন্বয়করা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাঠামো নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। এসময় জামায়াতের আমীর প্রস্তাব দেন, যেহেতু ছাত্রদের নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে, তাই তাদের মতামত নেওয়া উচিত। অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির জিএম কাদের মার্শাল ল জারি করার প্রস্তাব দেন, যা পরে সমালোচনার মুখে তিনি সংশোধন করেন।
চরমোনাই পীর মাওলানা ফয়জুল করীম নিবন্ধিত দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন। অন্য নেতারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে মত দেন।
জোনায়েদ সাকির তৎপরতা
জোনায়েদ সাকি বঙ্গভবনে তার সমন্বয়কদের প্রবেশের জন্য বেশ তৎপর ছিলেন বলে উল্লেখ করেন মাসউদ। বারবার দরবার হল ছেড়ে বাইরে গিয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন।
পোস্টে আরও বলা হয়, আসিফ নজরুলকে বিভিন্ন দল ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করার দায়িত্ব দিতে বলেন, যেহেতু তিনি তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়। তবে মাসউদের মতে, আসিফ নজরুল বা বিএনপি-জামায়াত কোনো পরিকল্পিত কৌশল নিয়ে বঙ্গভবনে যাননি।
পোস্টে মাসউদ স্পষ্টভাবে বলেন, ৫ আগস্টের হঠাৎ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতা প্রস্তুত ছিলেন না। নেতারা তাৎক্ষণিক যা ভালো মনে করেছেন, সেটাই করেছেন। তবে আসিফ নজরুলের ওপর পুরো দায় চাপানো বাড়াবাড়ি বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গভবনে ফ্যাসিস্টদের সহযোগী হিসেবে পরিচিত কিছু নেতার উপস্থিতি ছিল, যা পরিকল্পিত হতে পারে।
৫ আগস্টের ঘটনার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং অংশগ্রহণকারী নেতাদের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকলেও শেখ মুহাম্মদ মাসউদের অভিজ্ঞতা আরও একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে। তার পোস্টটি শুধু ঐতিহাসিক ঘটনাটি বোঝার ক্ষেত্রে নয়, বরং ভবিষ্যতের রাজনীতি ও অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে সবার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার সুযোগ হিসেবে দেখা যেতে পারে।
repoter