ঢাকা,   বুধবার
৪ ডিসেম্বর ২০২৪ , ০২:২১ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* বিপিএল থিম সংয়ের কিছু লাইন লিখেছেন ড. ইউনূস * ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বিষয়ে একচুলও ছাড় নয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তীব্র প্রতিবাদ * দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি * জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানাবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস * সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকিতে বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাজ্য * ডেঙ্গুতে চলতি বছরে মৃত্যু ৫০০ ছাড়াল * নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন বন্ধ * সীমান্তে যেকোনো অপতৎপরতা রোধে সতর্ক বিজিবি * বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা * বাবা-মেয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা, রাণীনগরে উদ্ধার মরদেহ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক-বাবরসহ সব আসামি খালাস

repoter

প্রকাশিত: ১২:৪৯:৫১অপরাহ্ন , ০১ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১২:৪৯:৫১অপরাহ্ন , ০১ ডিসেম্বর ২০২৪

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

২১ আগস্ট ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামিকে খালাস দিয়েছে হাইকোর্ট। রবিবার (১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে বলা হয়, অভিযোগ প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ পর্যাপ্ত প্রমাণ এবং নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে। আদালত আরও উল্লেখ করেন, তদন্ত এবং মামলার বিভিন্ন পর্যায়ে তদন্তকারীদের ত্রুটি ও পক্ষপাতিত্ব রায় প্রদানে প্রভাব ফেলেছে।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও হামলায় আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতা-কর্মী নিহত এবং ৩০০ জনেরও বেশি আহত হন। ঘটনাটি দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং তৎকালীন সরকারের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়।

এই মামলার দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার একটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এছাড়া ১৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করলে আজকের রায়ে সবাইকে খালাস দেওয়া হলো।

হাইকোর্টের রায়ের বিশদ বিবরণ

হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ে উল্লেখ করে, মামলার তদন্তের সময় পর্যাপ্ত নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখা হয়নি। তারা বলেন, "তদন্ত কর্মকর্তারা মামলার প্রকৃত অপরাধী শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রভাব ফেলেছে তদন্ত প্রক্রিয়ায়।" আদালত আরও জানান, রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থাপিত সাক্ষ্য-প্রমাণ যথেষ্ট নয় এবং অনেক ক্ষেত্রে সেগুলো পরস্পরবিরোধী।

বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান রায় ঘোষণার সময় বলেন, "ন্যায়বিচারের জন্য অপরাধের প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করা এবং সঠিক প্রক্রিয়ায় প্রমাণ উপস্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু এই মামলায় তা হয়নি।"

রাজনৈতিক মহলের প্রতিক্রিয়া

রায় ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পক্ষ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, "এটি ন্যায়বিচারের একটি কালো অধ্যায়। এই রায়ের মাধ্যমে ২১ আগস্ট হামলার শিকার হওয়া পরিবারগুলোর প্রতি অবিচার করা হলো।" তিনি আরও বলেন, "আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আপিল করবো।"

অন্যদিকে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রায়কে "ন্যায়বিচারের বিজয়" হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, "তারেক রহমানসহ সব নেতাদের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছিল, তা আজ আদালতের মাধ্যমে নাকচ হলো। আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট।"

ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর প্রতিক্রিয়া

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের পরিবার এবং আহত ব্যক্তিরা রায়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। হামলায় নিহত আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানের পরিবারের সদস্যরা বলেন, "আমরা এই রায়ে স্তম্ভিত। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে আমাদের প্রিয়জনদের হত্যার বিচার পেলাম না।"

একইভাবে হামলায় আহত আওয়ামী লীগ কর্মী হানিফ বলেন, "আমরা আশা করেছিলাম যে উচ্চ আদালত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে। কিন্তু আজকের রায়ে আমাদের আশা ভেঙে গেছে।"

মানবাধিকার ও আইনি বিশ্লেষণ

আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, মামলার তদন্ত এবং প্রক্রিয়াগত ত্রুটি রায়ের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, "এই মামলার তদন্তের সময় রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব এবং সঠিক প্রমাণ সংগ্রহের অভাব রায়কে প্রভাবিত করেছে।"

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, "এই ধরনের রায় অপরাধীদের ছাড় দেওয়ার উদাহরণ হয়ে থাকবে এবং এটি বিচার ব্যবস্থার ওপর জনসাধারণের আস্থা নষ্ট করতে পারে।"

রায় নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে জানিয়েছে যে তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করবে। আওয়ামী লীগ নেতারা আশা করছেন, উচ্চতর আদালতে এই রায় পুনর্বিবেচনা করা হবে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে।

অপরদিকে, বিএনপি এই রায়কে তাদের রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি অন্যায়ভাবে আনা সব অভিযোগের সমাপ্তি হিসেবে দেখছে এবং তারা জনগণের কাছে এই রায়কে ইতিবাচক বার্তা হিসেবে তুলে ধরার পরিকল্পনা করছে।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মতো ঘটনাগুলোর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে স্থিতিশীলতা এবং জনগণের বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে আজকের রায় রাজনৈতিক মেরুকরণ আরও তীব্র করবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

repoter