
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
২০২৫ সাল বৈশ্বিক পণ্যবাজারের জন্য একটি অস্থির বছর হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। তারা জানায়, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতিমালা বাস্তবায়ন এবং চীনের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বৈশ্বিক বাণিজ্যের গতিপ্রকৃতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকেই বলে আসছেন, ক্ষমতায় বসার পর চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানো হবে। এই পদক্ষেপ বৈশ্বিক বাণিজ্যপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, চীনের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা চললেও বৈশ্বিক মন্দার কারণে তাদের প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথ এখনও অনিশ্চিত।
রয়টার্সের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বৈশ্বিক পণ্যবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে শুল্ক আরোপের মাধ্যমে বাণিজ্যিক অংশীদার দেশ ও সংস্থাগুলোর মধ্যে ছাড় দেওয়ার প্রবণতা দেখা যেতে পারে, যা সাময়িকভাবে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে পারে। এতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নীতি প্রণয়নে সহজতা আসতে পারে।
অন্যদিকে, চীনের সরকার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বড় ধরনের প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। এই পদক্ষেপ কার্যকর হলে চীনের প্রবৃদ্ধি বাড়বে এবং বৈশ্বিক পণ্যবাজারে এর প্রভাব পড়তে পারে। যদিও অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কম থাকার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি টানার অঙ্গীকার করেছেন, যা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাকে শক্তিশালী করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে তামা ও ধাতব পণ্যের বাজার লাভবান হতে পারে। তবে রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে বাজারে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হতে পারে।
বাজার-বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে, ট্রাম্প প্রশাসন যদি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে আসে বা ন্যাটোর সদস্যপদ বাতিল করে, তবে বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রবাহে উল্লেখযোগ্য বিঘ্ন ঘটতে পারে। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে এবং অনেক দেশ আর্থিক নীতি কঠোর করতে বাধ্য হতে পারে। এর ফলে লোহা ও তামার মতো পণ্যের দাম আরও কমতে পারে।
অন্যদিকে, চীন জ্বালানি রূপান্তর ও সবুজ অর্থনীতির দিকে মনোযোগ দিলে ২০২৫ সালে তামা, লিথিয়াম এবং রুপার মতো ধাতব পণ্যের চাহিদা বেড়ে যেতে পারে।
এদিকে ওপেক প্লাস তাদের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে জ্বালানি তেল উৎপাদন কমানোর মাধ্যমে দাম স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করছে। তবে অন্যান্য দেশ তেল উত্তোলন বৃদ্ধি করলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম আরও কমতে পারে। দুই বছর ধরে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি প্রায় ৭৫ ডলারে স্থিতিশীল রয়েছে।
বিশ্লেষকরা আরও উল্লেখ করেন যে, সরকারি প্রণোদনার কারণে চীনের অর্থনৈতিক সংকট কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। নির্মাণ খাতে কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ভোক্তা ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি চীন ইউরোপ এবং গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে, তবে তামা ও আকরিক লোহাসহ অন্যান্য পণ্যের চাহিদা বাড়বে। তবে বৈশ্বিক বাজারে বিদ্যুৎচালিত যানবাহনের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় জ্বালানি তেলের চাহিদা কমতে পারে।
২০২৫ সালে বৈশ্বিক পণ্যবাজার কেমন থাকবে, তা নির্ভর করবে বিভিন্ন অর্থনৈতিক নীতির বাস্তবায়ন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলার ওপর।
repoter