ছবি: ছবি: সংগৃহীত
বিগত ১৫ বছরে দেশের অর্থনৈতিক খাতে যে অনিয়ম ও দুর্নীতির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা ২-৪ মাসে স্বাভাবিক করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, এ সময়কালে অর্থনীতির ক্ষতি এতটাই গভীর হয়েছে যে তা শুধরে তুলতে সময় ও ধৈর্য প্রয়োজন।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক বাণিজ্য সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। সম্মেলনের শিরোনাম ছিল, ‘বেসরকারি খাতে দৃষ্টিভঙ্গি: প্রত্যাশা ও অগ্রাধিকার’।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বিগত সরকারের রেখে যাওয়া দুর্নীতির জাল অত্যন্ত গভীর। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তর পর্যন্ত দুর্নীতির শিকড় বিস্তার করেছিল। তিনি বলেন, "১৫ বছরে অর্থনৈতিক খাতে যা হয়েছে, তা অকল্পনীয়। এখানে সর্বোচ্চ পর্যায়ের লোকজন পর্যন্ত দুর্নীতিতে জড়িত ছিল।"
দেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "সংস্কারের বিষয়ে অনেক কথা হয়। তবে এর বাস্তবায়নে সময় লাগবে। আমরা জনগণকে একটা বার্তা দিতে চাই যে ভবিষ্যতে কেউ আর টাকা পাচার করতে পারবে না, চুরি করতে পারবে না।"
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "রিজার্ভের ক্ষয় রোধ হতে শুরু করেছে। দেশের অর্থনীতি কিছুটা স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে।" পাশাপাশি তিনি জানান, আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থাগুলো ইতিবাচক সাড়া দিতে শুরু করেছে। এ সংকেত অর্থনীতির জন্য শুভ লক্ষণ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাণিজ্য খাতে বেসরকারি বিনিয়োগের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, "বেসরকারি খাত দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি। তাদের কার্যক্রম সহজ করতে প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। তবে এজন্য সব পক্ষকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।"
সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ। তিনি বলেন, "বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে বড় ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু নীতিমালা ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে তারা অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে।"
সম্মেলনে উপস্থিত বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেন, "দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি।" তিনি আরও বলেন, "দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সরকারের ওপর আস্থা রাখতে চায়। এ আস্থা ধরে রাখতে স্বচ্ছ নীতিমালা প্রয়োজন।"
ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, "বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করার পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে।"
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের সভাপতি আবদুল হাই সরকার বলেন, "অর্থনৈতিক সংস্কার একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। কিন্তু এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে হলে ব্যাংকিং খাতকে আরও কার্যকর করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে ব্যাংকিং সেবা আরও সহজ এবং স্বচ্ছ করতে হবে।"
সম্মেলনে আলোচকরা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তারা জানান, দেশের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে। তবে এর সফল বাস্তবায়নের জন্য ধৈর্য, নৈতিকতা এবং সমন্বিত প্রয়াসের ওপর জোর দেন তারা।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ তার বক্তব্যের শেষাংশে বলেন, "দীর্ঘদিনের অনিয়ম এবং দুর্নীতির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা আনতে হবে। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে দেশের অর্থনীতি নতুনভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠবে।"
সম্মেলনটি দেশের অর্থনীতির পুনর্গঠন এবং বেসরকারি খাতের ভূমিকা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও সুপারিশ নিয়ে শেষ হয়।
repoter