
ছবি: সিরিয়ায় কিশোর আঁকা গ্রাফিতি। ছবি : সংগৃহীত
দক্ষিণ সিরিয়ার দারা শহরে ১৪ বছরের এক কিশোরের হাতে আঁকা একটি গ্রাফিতি সিরিয়ার ইতিহাস বদলে দেয়। ২০১১ সালে স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে জাতীয় বিদ্রোহের সূচনা করে এই গ্রাফিতি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, মুয়াবিয়া সায়সানেহ নামের ওই কিশোর প্রেসিডেন্ট আসাদকে নিশানা করে একটি সড়কের দেয়ালে লিখেছিলেন, "এজাক এল দরজা, ইয়া ডাক্তার", যার বাংলা অর্থ—"এবার আপনার পালা, ডাক্তার।"
বাশার আল আসাদ পেশায় ছিলেন একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ। দামেস্কের ইউনিভার্সিটি থেকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষ করে লন্ডনে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। তবে বড় ভাই বাসেল আল আসাদের মৃত্যুর পর বাবার আদেশে দেশে ফিরে রাজনীতিতে যোগ দেন। ২০০০ সালে বাবা হাফিজ আল আসাদের মৃত্যুর পর সিরিয়ার ক্ষমতায় আসেন বাশার। শাসনকালে তিনি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেও পরবর্তী সময়ে বাবার মতোই কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠেন। তার শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিরোধীদের দমন-পীড়নের অভিযোগ ওঠে।
২০১১ সালের মার্চে কিশোর মুয়াবিয়া সায়সানেহের গ্রাফিতি জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করে। পুলিশ মুয়াবিয়া ও তার কয়েকজন বন্ধুকে গ্রেপ্তার করে এবং তাদের উপর নির্যাতন চালায়। ২৬ দিন ধরে তাদের গোপনে আটক রাখা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে মুয়াবিয়ার বাবা-মা, প্রতিবেশী ও আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। পুলিশ টিয়ার গ্যাস এবং গুলি ছুড়ে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করে। কিন্তু বিক্ষোভ দারা শহর থেকে পুরো সিরিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
২০১১ সালের ১৫ মার্চ সিরিয়ায় প্রথমবারের মতো ধারাবাহিক বিক্ষোভ শুরু হয়। জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে স্বাধীনতার দাবি জানাতে থাকলেও আসাদ বাহিনী শক্তি প্রয়োগে এই আন্দোলন দমনের চেষ্টা করে। তাদের নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও দমন-পীড়নের কারণে বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়। সিরিয়ার মানুষ ক্রমশ বিদ্রোহে জড়িয়ে পড়ে এবং এটি গৃহযুদ্ধে পরিণত হয়। এই যুদ্ধই পরবর্তী সময়ে ২১ শতকের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করে।
২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ সিরিয়াতেও প্রভাব ফেলে। বাশার আল আসাদের ক্ষমতা টলমল হয়ে ওঠে। তবে রাশিয়া ও ইরানের সামরিক সহায়তায় সেসময় ক্ষমতায় টিকে যান তিনি। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বহু নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান এবং লাখ লাখ মানুষ শরণার্থী হয়ে বিভিন্ন দেশে পালাতে বাধ্য হন। বাশারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আরো তীব্র হয়।
সম্প্রতি সিরিয়ায় বিদ্রোহীরা তিনটি শহর দখল করে নেয়। এ সময় রাশিয়া ও ইরান তাদের সামরিক সহায়তা প্রত্যাহার করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয়ে বাশার আল আসাদ গোপনে দেশ ছাড়েন। তিনি একটি প্লেনে চড়ে সিরিয়া থেকে পালিয়ে যান। তার বিদায়ের মাধ্যমে দুই দশকের শাসনের অবসান ঘটে। সিরিয়ার জনগণের জন্য এটি ছিল দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণের মতো।
মুয়াবিয়া সায়সানেহের গ্রাফিতি এখন সিরিয়ার জাতীয় বিদ্রোহের একটি প্রতীক। এক কিশোরের ক্ষুদ্র প্রতিবাদই গোটা দেশকে একত্রিত করে এবং অবশেষে স্বৈরশাসকের পতন ঘটায়।
repoter