ছবি: ফাইল ছবি
কুষ্টিয়ার বৃহত্তম চাল মোকাম খাজানগরে নতুন ধান ওঠার মৌসুমেও চালের দাম কমার বদলে আরও বেড়ে গেছে, আর এর পেছনে মূল ভূমিকায় রয়েছে ১১টি স্বয়ংক্রিয় মিলের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের মধ্যে আটজনই আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত, যারা দলীয় পরিচয়ের সুবাদে চালের বাজারে কর্তৃত্ব বজায় রেখেছেন। এই সিন্ডিকেটের প্রভাব এতটাই বিস্তৃত যে, খাজানগরের অর্ধশতাধিক মিলের মধ্যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ শুধুমাত্র ১১ মালিকের হাতে। নতুন ধানের সরবরাহ বেড়ে গেলেও মোটা ও চিকন চালের দাম কেজিতে ৪-৫ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ভোক্তারা অসন্তোষ প্রকাশ করলেও প্রশাসন দৃশ্যত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চালের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে বেশ কয়েকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও তাতে তেমন কোনো ফল আসেনি। মিল মালিকদের দাবি, ধানের দাম বেশি থাকায় চালের দাম বাড়ছে, যদিও বিশ্লেষণে দেখা গেছে ধানের বাজারদর এবং চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে ফারাক। কৃষি বিপণন কর্মকর্তারা বিষয়টি ‘অযৌক্তিক ও কারসাজিমূলক’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং প্রস্তাব করেছেন, উৎপাদন খরচের ভিত্তিতে ধানের মূল্য নির্ধারণ করে বাজারে তা কার্যকর করতে হবে।
অন্যদিকে, সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে থাকা কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার রাজনৈতিক প্রভাব এতটাই প্রবল যে, তারা জেলার ধান-চাল মজুদ, উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণের পুরো ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এসব মিল মালিক নতুন ধান থেকে প্রতি মণ চাল উৎপাদনে বায়োপ্রডাক্টসহ অন্যান্য সামগ্রী বিক্রির মাধ্যমেও অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করছেন। সিন্ডিকেটের সদস্যরা মজুতের নিয়ম উপেক্ষা করে হাজার হাজার টন ধান ও চাল গুদামে জমা রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মিল মালিকদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মীদের প্রভাব এতটাই স্পষ্ট যে, তাদের কেউ দলীয় কোষাধ্যক্ষ, কেউ উপজেলা কমিটির নেতা, আবার কারও পরিবারের সদস্যরা ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করেছেন। প্রশাসনের নজরদারি সত্ত্বেও সিন্ডিকেটের ক্ষমতা এতটাই প্রবল যে, তারা বাজারকে তাদের ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে। এর ফলে শুধু কুষ্টিয়া নয়, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের খুচরা বাজারেও চালের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে।
repoter